‘শেকড়’ মনে রেখে নিখরচায় চিকিৎসায় ডুবে আলোক

দুঃস্থ গ্রামবাসীদের নিখরচায় দাঁতের চিকিৎসক করেন তিনি। যাঁর শেকড় ওই গ্রামেই, গ্রামেরই এক ভ্যানচালকের পুত্র তিনি, আলোক দাস। আলোকবাবু বলছেন, স্কুলে পড়ার সময় মা বলেছিলেন, ‘‘ঈশ্বর যেন তোকে সেই ক্ষমতা দেন, যাতে তুই গ্রামের গরিব মানুষের সেবা করতে পারিস।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাগদা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:১৩
Share:

দুঃস্থ গ্রামবাসীদের নিখরচায় দাঁতের চিকিৎসক করেন তিনি। যাঁর শেকড় ওই গ্রামেই, গ্রামেরই এক ভ্যানচালকের পুত্র তিনি, আলোক দাস।

Advertisement

আলোকবাবু বলছেন, স্কুলে পড়ার সময় মা বলেছিলেন, ‘‘ঈশ্বর যেন তোকে সেই ক্ষমতা দেন, যাতে তুই গ্রামের গরিব মানুষের সেবা করতে পারিস।’’ মা রেণুকাদেবীর সে কথাই ঠারেঠোরে মেনে চলছেন বাগদার সাগরপুরের দন্ত চিকিৎসক আলোক দাস। বিনা পয়সায় চিকিৎসাই নয়, প্রয়োজনে বিনামূল্যে ওষুধপত্রও দেন তিনি। মাঝে মধ্যে উদ্যোগ নিয়ে গ্রামে গ্রামে দন্ত চিকিৎসার শিবিরও করেন আলোক।

বাবা সুধীর দাস ছিলেন ভ্যানচালক। কখনও বা গ্রামে অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করতেন। অভাবের সংসারেও বাবা-মা তাদের এক মাত্র ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্থানীয় বাগদা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আলোকবাবু গুরুনানক ডেন্টাল হাসপাতাল থেকে বিডিএস করেছেন। পিজি হাসপাতাল ও বিসি রায় হাসপাতালের হাউস সার্জেন হিসাবে কাজ করেছেন। ইচ্ছে করলেই শহরের কোনও পরিচিত হাসপাতাল বা বেসরকারি নার্সিংহোমে কাজ করতেও পারতেন। কিন্তু মায়ের কথাগুলো তিনি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই নাড়ির টানে ফিরে এসেছেন নিজের গ্রামে। সেখানেই সম্প্রতি খুলেছেন চেম্বার। তবে, বনগাঁ শহরেও তাঁর চেম্বার আছে। বাড়িতে রোজ সকাল সাতটা থেকে ন’টা পর্যন্ত রোগী দেখে বেড়িয়ে যান বনগাঁ। নিত্যকার রুটিন।

Advertisement

বাগদার ওই এলাকায় বেশির ভাগ মানুষ খেত মজুর। তাঁদের পক্ষে ত্রিশ কিলোমিটার পথ উজিয়ে দাঁতের চিকিৎসক করানো প্রায় দুঃসাধ্য। গ্রামের এক বৃদ্ধ খেত মজুর বলছেন, ‘‘ডাক্তারবাবু আমাদের দেবতার মতো। কোনও ভিজিট নেন না।’’ খেত মজুর রণজিৎ মণ্ডলের কথায়, ‘‘গরিব মানুষ ঠিক মতো সংসারই চলে না তো দাঁতের চিকিৎসা। ব্যথা নিয়েও তাই বাড়িতেই বসে তাকতাম। আলোক ডাক্তার নিখরচায় সারিয়ে দিয়েছেন সেই রোগ।’’

আলোকবাবু যা শুনে বলছেন, ‘‘আসলে কী জানেন তো, মায়ের কথা ভুলতে পারিনি। ওঁর কথা রাখতেই ফিরে এলাম গ্রামে।’’

দীর্ঘ দিন ভোগার পরে আলোকের চিকিৎসায় সেরে উঠেছেন এক গ্রামবাসী। বলছেন, ‘‘আসল কথা হল যাঁরা নিজের শেকড়টা ভোলেন না তাঁরাই মানুষ। আমাদের আলোক-ডাক্তার যেমন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন