মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ঝড়ের মতো ঘোরাফেরা করেন। পাখির মতো হাঁটাচলা। আর তার জন্য বছরভর নিরলস শরীরচর্চা ও খাদ্যাভ্যাসে থাকেন। তাই নিজের পুরনো চেহারা দেখে আপত্তি করারই কথা। তা-ই করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
বাজেট পেশ হওয়ার পরে বুধবার বিধানসভা ছাড়ার আগে সতীর্থ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন নদিয়ায় একটি দলীয় কর্মসূচিতে মহাসচিব যাতে যান, সে কথা বলতে। তখনই সেখানে নিজের পুরনো ছবি দেখেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘আমার এই ছবি রেখেছেন কেন? আমি কি এত মোটা!’’ আচমকা দলনেত্রীর এই অনুযোগের মুখে পড়ে দ্রুত তা বদলে এখনকার একটি ছবি আনানোর তোড়জোড় শুরু করে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী। দলনেত্রীর নির্দেশ, তাই ছবি বদল নিশ্চিত। তবে এ ছবির সঙ্গে পার্থের স্মৃতি অনেক। ক্ষমতায় আসার আগে মধ্যরাতে বেহালায় তৃণমূলের স্বার্ধীনতা দিবস উদযাপনের একটি অনুষ্ঠানে তোলা হয়েছিল ওই ছবি। বিরোধী দলনেতা হওয়ার সময়ে দলনেত্রীর এই ছবিই বিধানসভায় নিজের ঘরে এনেছিলেন তিনি। দলের তৎকালীন সব বিধায়ককে দিয়েছিলেন একটি করে। দল হোক বা সরকারি দফতর, তার পরে পার্থ যখন যেখানে গিয়েছেন, সেখানেই মাথার উপরে জায়গা পেয়েছে এই ছবিই। এ বার সরাতে হবে!
বাজেট-পর্ব শেষ করে নিজের ঘরে এ দিন দলের বিধায়কদের নানা আবদার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন পার্থ। মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে মৃদু হেসে শাসক দলের মহাসচিব বলেন, ‘‘আর কিছু করার নেই! চোখে যখন পড়েছে, বদলাতেই হবে।’’ তবে শুধু বিধানসভার ঘরই নয়, এই ছবি তো পার্থের বিকাশ ভবনের দফতরেও আছে। ঘটনাচক্রে, এ দিনই এই ঘটনার ঘণ্টাতিনেক আগে দলের বর্ধিত কোর কমিটির সভায় মহাসচিব দলনেত্রীর ছবির প্রসঙ্গেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ফের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রচারে কোথাও অন্য কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে দলনেত্রীর ছবিই ব্যবহার করতে হবে। এই ঘটনার পরে সেই ছবি বেছেও দেবেন তিনি? এই প্রশ্নের জবাবে অবশ্য ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে পার্থ দিয়েছেন, প্রয়োজনে তা-ও করতে হবে!
বেহালায় ওই ছবি যখন তোলা হয়, তখন মমতা ছিলেন একেবারেই অন্য রকম। এখন ঝরে গিয়েছেন অনেক। নিয়মিত চর্চায় এখন ওজন নামিয়ে এনেছেন আটচল্লিশের কাছাকাছি। দিনে কমবেশি ১৫ কিলোমিটার হাঁটেন। খাওয়াদাওয়ায় সংযম এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, দু’দশক ভাতের সঙ্গে প্রায় কোনও সম্পর্কই নেই তাঁর। সেই বদল এখন ধরা পড়ে সকলের চোখেই। পার্থের ঘরে উপস্থিত দলের হাফ ডজন বিধায়ক বার্তা পেয়ে গেলেন, ছবি বদলও অনিবার্য!