Amartya Sen

এক থাকতেই হবে, বার্তা অমর্ত্য সেনের

বাংলায় ভোটের মুখে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের এই সতর্কবার্তাকে বিশেষ অর্থবহ বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:০১
Share:

—ফাইল চিত্র।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নিজ-নিজ লক্ষ্য থাকতেই পারে, তবে সাম্প্রদায়িকতা যাতে তার কদর্য মাথা তুলতে না-পারে সেটা সব ধর্মনিরপেক্ষ দলের অভিন্ন লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করলেন অমর্ত্য সেন। সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, অতীতে বাংলার প্রভূত ক্ষতি হয়েছে এই সাম্প্রদায়িকতার কারণে।

Advertisement

বাংলায় ভোটের মুখে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের এই সতর্কবার্তাকে বিশেষ অর্থবহ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, নীতিগত অবস্থান জানিয়েই নিজের দায়িত্ব সারেননি ৮৭ বছর বয়সি এই অধ্যাপক। বরং বস্টন থেকে ই-মেলে সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন তৃণমূল ও বাম দলগুলি-সহ সব ধর্মনিরপেক্ষ দলের দায়িত্বের কথা।

অমর্ত্যের কথায়, “ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির মধ্যে তাদের কর্মসূচির খুঁটিনাটি নিয়ে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতাকে খারিজ করার প্রশ্নে অবশ্যই তাদের অভিন্নমত হতে হবে। (রাজ্যকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখার ক্ষেত্রে) তৃণমূলের থেকে বাম দলগুলির দায়বদ্ধতা এতটুকু কম হওয়া উচিত নয়।” তাঁর বক্তব্য, “প্রতিটি দল তাদের লক্ষ্য পূরণে তৎপর হতেই পারে, কিন্তু বাংলাকে ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাখার মূল লক্ষ্য থেকে ভ্রষ্ট হওয়া চলবে না। আগেরটা আগে দেখতেই হবে। নয়তো আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নেতাজির যোগ্য উত্তরসূরিই নই।”

Advertisement

ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপির তাবড় নেতারা সুযোগ পেলেই বাংলার মনীষীদের নাম উল্লেখ করছেন। সন্দেহ নেই, বাংলার মানুষের মন জয়ই তাঁদের লক্ষ্য। সেই প্রসঙ্গ সরাসরি উল্লেখ না করেও এই পরিপ্রেক্ষিতটিকে বাদ দেননি অমর্ত্য। মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই মনীষীদের প্রত্যেকই ঐক্যের কথা বলে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও স্বামী বিবেকানন্দ এঁরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে সওয়াল করে গিয়েছেন। তাঁরা যে সমাজের কথা বলেছেন, সেখানে এক সম্প্রদায়কে অপরের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।” পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন, “কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা অন্য যে কোনও অগ্রণী বাঙালির মতো সম্মান দিই, তাঁকে সমর্থন করি এটাই বাঙালির সংস্কৃতি। সাম্প্রদায়িকতার কারণে অতীতে বাংলাকে অসম্ভব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। বাংলা তাই সাম্প্রদায়িকতাকে দৃঢ় ভাবে প্রত্যাখ্যান করারও শিক্ষা নিয়েছে।”

বিশ্বভারতীতে অবৈধ ভাবে জমির দখল রাখা নিয়ে তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে অমর্ত্যের জবাব, “ভিসি-র অদ্ভুত কাজে আমি হতবাক। তিনি কখনওই আমাকে কোনও জমি ফেরতের জন্য লেখেননি। সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছেন। তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিক রয়েছে কিনা, আমি নিশ্চিত নই।”

ভিসি কি তাঁকে বদনাম করার জন্যই এমন করেছেন? উত্তরে অমর্ত্য বলেন, “সেটা হতেও পারে। তবে তিনি যে রকম অযৌক্তিক কাজকর্ম করছেন, তাতে এটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।” তবে এই জমি-বিতর্কের জন্য বিজেপিকে দুষতে রাজি নন তিনি। বলেছেন, “যে দল সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক বিভাজনের ভাবনাকে উস্কে দেয়, বিশেষ করে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে অবশ্যই আমি সেই দলের সমালোচনা করি। এটাও ঠিক যে, ভিসি বিদ্যুৎ চক্রবর্তী তাদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করার প্রমাণ দিয়েছেন। তবে এক লাফে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি না যে এই মিথ্যা অভিযোগের পিছনে বিজেপি-ই দায়ী।”

অমর্ত্য আগেই বিশ্বভারতীকে জানিয়েছেন, যে জমির কথা বলা হচ্ছে, তা দীর্ঘমেয়াদি লিজে আছে। মেয়াদ শেষ হতে ঢের বাকি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই অমর্ত্য সেনের কাছে গোটা রাজ্যের হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। নিজেকে তাঁর ‘বোন’ ও ‘সুহৃদ’ মনে করতে বলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন