নিয়মের ফাঁক গলেই ছুটছে অ্যাম্বুল্যান্স

বীরভূমের মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুর পরে ফের কাঠগড়ায় বর্ধমানের অ্যাম্বুল্যান্স। অসাধু অ্যাম্বুল্যান্স-চালকদের ‘কার্যকলাপে’ বারবার শহরের মুখ পুড়ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতানেত্রী, শহরের বিশিষ্টজন থেকে অ্যাম্বুল্যান্স ইউনিয়নের কর্তারাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০১:২৮
Share:

বর্ধমানে রাস্তার পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুল্যান্স। নিজস্ব চিত্র

বীরভূমের মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুর পরে ফের কাঠগড়ায় বর্ধমানের অ্যাম্বুল্যান্স। অসাধু অ্যাম্বুল্যান্স-চালকদের ‘কার্যকলাপে’ বারবার শহরের মুখ পুড়ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতানেত্রী, শহরের বিশিষ্টজন থেকে অ্যাম্বুল্যান্স ইউনিয়নের কর্তারাও।

Advertisement

শনিবার রাতে ‘বর্ধমান শহর অ্যাম্বুল্যান্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ সংগঠনের সদস্যেরা বৈঠক করে ঠিক করেন, কলকাতার পূর্ব যাদবপুরে পুলিশের হাতে ধরা পড়া অ্যাম্বুল্যান্স চালকের পাশে দাঁড়ানো তো দূর, তাঁর শাস্তির দাবি জানানো হবে। জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কাছে দাবি করা হবে, প্রতিটি অ্যাম্বুল্যান্সে ‘জিপিএস’ যন্ত্র লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ইউনিয়নগুলির দাবি, বর্ধমান শহরে বেসরকারি সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো। আইসিসিইউ সুবিধা-যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে দু’টি। কিন্তু তার বাইরেও বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্স ‘আইসিসিইউ’ লিখে চালানো হয়, যা আদতে তা ভুয়ো।

অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ‘আইসিসিইউ’ অ্যাম্বুল্যান্সে চিকিৎসকের বদলে থাকেন কম্পাউন্ডার। সে জন্য রোগীর পরিবারকে দিতে হয় ৬-৮ হাজার টাকা। সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্সে চিকিৎসক-কিট ও অক্সিজেন গ্যাস-সিলিন্ডার রাখার কথা। বেশিরভাগ অ্যাম্বুল্যান্সেই সে ব্যবস্থা নেই। থাকলেও অক্সিজেন ও টেকনিসিয়ান বাবদ অতিরিক্ত এক হাজার টাকা দিতে হয় রোগীর পরিবারকে। কিন্তু টেকনিসিয়ানের নামে কখনও ‘খালাসি’ আবার কখনও ‘নার্সিংহোম কর্মী’ পাড়ি দেন।

Advertisement

বর্ধমানের নবাবহাটের অন্নপূর্ণা নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন বীরভূমের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অরিজিৎ দাস। তাকে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় কলকাতায়। অভিযোগ, সাধারণ এসি অ্যাম্বুল্যান্সকেই ‘আইসিসিইউ’ বলে সাজানো হয়। এসি মিস্ত্রিকে ‘ডাক্তার’ বলে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই অরিজিতের মৃত্যু হয়। পুলিশ ওই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক এবং এসি মিস্ত্রিকে গ্রেফতার করার পরেই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক ও নার্সিংহোমগুলির ‘চক্রের’ রমরমা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শনিবার রাতে কলকাতা থেকে পুলিশ এবং সিআইডি-র একটি দল ওই নার্সিংহোমে তদন্তে আসে।

শহরের নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠনের এক নেতার অভিযোগ, “নবাবহাট জুড়ে রয়েছে এই চক্র। বীরভূমের ওই ছাত্রকে বর্ধমান বা কলকাতার কোনও হাসপাতালে পাঠিয়েছিল রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল। কিন্তু ওই ছাত্রের পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। তারাই ১৬ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে দেয়। অথচ, বর্ধমান থেকে আইসিসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সের সর্বোচ্চ ভাড়া সাড়ে বারো হাজার টাকা। বাকি টাকা কে নিল?” ওই নার্সিংহোমের কর্তাদের অবশ্য দাবি, অ্যাম্বুল্যান্সের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। সংশ্লিষ্ট অ্যাম্বুল্যান্সটির পরিচালক ‘বর্ধমান ফিজিক্যাল কালচারাল সেন্টার’ জানায়, মাসিক চুক্তিতে চালকের হাতেই সেটির ভার ছেড়ে দিয়েছে তারা।

বারবার এক ঘটনার পরেও প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসী। বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা-র কথায়, “বারবার এক ঘটনা শহরের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়।” নাট্যকার রমাপতি হাজরাও বলেন, “এই ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় আমাদের শহরের মুখ পুড়ল।” তৃণমূলের বর্ধমানের কাউন্সিলর সুশান্ত প্রামাণিকের দাবি, “এর একটি বিহিত হওয়া উচিত।” অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে অভিযোগ রয়েছে আরও। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, ভাড়া নিয়ে ‘দর কষাকষি’, যেতে না চাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে প্রায়ই।

পরিবহণ দফতর জানায়, গাড়ির শ্রেণি পরিবর্তনের সময়ে নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, দেখে নেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁদের আর কিছু করণীয় নেই। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়ের বক্তব্য, “আমাদেরও ধরার কোনও এক্তিয়ার নেই। অভিযোগ এলে বড়জোর আমরা তদন্ত করতে পারি।” ফলে, নিয়মের ফাঁক গলে মওকা বুঝে দাঁও মারেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন