কাল হয়তো অমিতের পা দুর্গন্ধের বস্তিতেও

আদি গঙ্গার কালো জলের দুর্গন্ধে নাক চাপা দিতে হয়। পাড়ে জঞ্জালের স্তূপ। তার গায়ে হেলান দিয়ে হেলাফেলার জীবনযাপন। নর্দমা না থাকারই মতো। মহিলাদের শৌচালয় বলতে চার দিকে চট ঘেরা একটা জায়গা। সামান্য বৃষ্টি হলেই পূতিগন্ধময় জল-জঞ্জাল ঢুকে পড়ে ঘরে-মন্দিরে-উঠোনে।

Advertisement

রোশনী মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৩৫
Share:

নিরাপত্তার প্রশ্নে এনএসজি ছাড়পত্র দিলেই বুধবার এখানে আসতে পারেন অমিত শাহ। সোমবার তারই তোড়জোড় চলছে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে চেতলা লকগেটের সাইডিং বস্তিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আদি গঙ্গার কালো জলের দুর্গন্ধে নাক চাপা দিতে হয়। পাড়ে জঞ্জালের স্তূপ। তার গায়ে হেলান দিয়ে হেলাফেলার জীবনযাপন। নর্দমা না থাকারই মতো। মহিলাদের শৌচালয় বলতে চার দিকে চট ঘেরা একটা জায়গা। সামান্য বৃষ্টি হলেই পূতিগন্ধময় জল-জঞ্জাল ঢুকে পড়ে ঘরে-মন্দিরে-উঠোনে। তখন খাবার জলের কলের মুখ বন্ধ রেখে জল আনতে হয় বাইরে থেকে।

Advertisement

চেতলা লকগেটের সাইডিং বস্তি। খোদ পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পাড়া। আরও বড় কথা মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের এলাকাভুক্ত। এনএসজি-র ছাড়পত্র মিললে কাল, বুধবার এই ‘অস্বচ্ছ’ ভারতের ঘরে ঢুকবেন স্বচ্ছ ভারতের অন্যতম কাণ্ডারী অমিত শাহ। চা-ও খাবেন।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিতের তিন দিনের বঙ্গ সফর শুরু হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার শিলিগুড়ি-নকশালবাড়ি থেকে। কাল কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে এবং পরশু, বৃহস্পতিবার রাজারহাটে অমিত দলের বুথ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সুখ-দুঃখের কথা বলবেন সংশ্লিষ্ট বুথের হতদরিদ্র পরিবারগুলির সঙ্গে। ভবানীপুরে অমিতের সফরসূচিতে রয়েছে চেতলা সাইডিং বস্তির পাঁচটি ঘর। যেখানকার বাসিন্দাদের নাম— অতনু মণ্ডল, মামনি মণ্ডল, টুলু মণ্ডল, সন্ধ্যা বৈদ্য, আরতি জানা। যাঁদের খুঁজে বার করেছেন বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি জীবন সেন, সম্পাদক নিতিন পটেল প্রমুখ। জীবনবাবু জানান, ওই বস্তির বাইরে চুনের মাঠ এলাকায় মণ্ডপ গড়া হবে। সেখানেই দলের বুথ কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অমিত।

Advertisement

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির সফরের আগে রবিবার ওই বস্তিতে গিয়ে তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছে সিআরপিএফ। আজ দুপুরে একই উদ্দেশে এনএসজি-র সেখানে যাওয়ার কথা। এনএসজি সবুজ সঙ্কেত দিলে নিজেদের শ্যাওলা-পিছল উঠোনেই অমিতকে বসিয়ে কথা বলবেন অতনু, মামনিরা। সেখানেই শীতলা মন্দিরে ইচ্ছা করলে অমিত যাতে পুজো দিতে পারেন, তার জন্যও বন্দোবস্ত রাখছেন বস্তিবাসীরা।

অতনুর মা কল্পনা মণ্ডল জানালেন, কুলতলিতে তাঁর বাড়ি। এই বস্তিতে আছেন গত ২৫ বছর ধরে। কখনওই উন্নতি দেখেননি। নিজে লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। স্বামী গোপাল মণ্ডল মণ্ডপ তৈরি করেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। কল্পনার কথায়, ‘‘অতনু শ্যামাপ্রসাদ কলেজে বি. কম অনার্স পড়ে। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অমিত শাহ এলে তাঁকে অনুরোধ করব, ওর যেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।’’

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা এলাকা। অধুনা মন্ত্রী ফিরহাদ দীর্ঘ দিন এই ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তা হলে কেন সেখানকার বস্তির এত দুর্দশা? বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, সেই জন্যই তো এখানকার মানুষ ধীরে ধীরে ঘাস ফুল ছেড়ে পদ্ম ফুলের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন! অমিতও সেখানে গিয়ে উন্নয়নের বার্তা দেবেন। তবে অমিত ওই বস্তিতে যেতে পারেন জেনে আগেই তৃণমূল সেখানকার বাসিন্দাদের হুমকি দিতে পারে বলে বিজেপির আশঙ্কা আছে। তা ছাড়া এনএসজি যদি নিরাপত্তার কারণে অমিতের ওই বস্তিতে ঢোকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাই বিকল্প কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের তালিকাও গন্তব্যের জন্য তৈরি রাখছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন