পশ্চিমবঙ্গে নির্বিঘ্নে রথযাত্রা হলে যতটা হুঙ্কার ছাড়তে পারতেন, যাত্রা-ভঙ্গে তার চেয়েও অনেক বেশি হুঙ্কার ছাড়ার সুযোগ পেয়ে গেলেন অমিত শাহ। হাইকোর্টের রায়ের জেরে আজ রাজ্য-মুখো হননি বিজেপি সভাপতি। কিন্তু দিল্লিতে বসেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। এ দিনের সফর বাতিল হলেও অমিত জানিয়েছিলেন কাল, শনিবার কলকাতায় যাবেন তিনি। যদিও রাতে বিজেপি সূত্রে বলা হয়, তাঁর সফর স্থগিত রাখা হয়েছে।
কোচবিহারে গেলে যে বক্তৃতা দিতেন, আজ দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সেগুলিই শোনালেন অমিত। তার সঙ্গে মেশালেন বাড়তি ঝাঁঝ। বললেন, ‘‘মমতা বুঝতে পারছেন, বিজেপির রথযাত্রা সব বিধানসভা কেন্দ্র, গ্রামে ঘুরলে রাজ্য পরিবর্তনের বীজ বপন হবে। তাই তাঁর ঘুম ছুটেছে। যাত্রা আটকানোর চেষ্টা করছেন। তিনি আমার পরামর্শ চাননি। তবু তাঁকে বলব, এ ভাবে যাত্রা আটকে জনতাকে সামলাতে পারবেন না। উল্টে আপনার উপর তাদের রোষ বাড়বে।’’
এ দিন বেলা একটায় যখন সাংবাদিক বৈঠক করছেন অমিত, তখনও হাইকোর্টের রায় আসেনি। তা সত্ত্বেও বিজেপি সভাপতি দাবি করেন, তিনটি রথযাত্রাই হবে। তিনিই যাত্রার উদ্বোধন করবেন। তিনটি রথই আগের পরিকল্পনা মতো ঘুরবে গোটা রাজ্যে। তবে সবটাই হবে আইন মেনে।
অমিতের যুক্তি, এর আগে তিনি ২৩ বার বাংলায় গিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও সফর করেছেন। তাঁদের কর্মসূচির পর কোথাও কোনও সংঘর্ষ হয়নি। বরং তৃণমূল আর পুলিশই গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করে। আর আদালতের রায় শোনার পরে তাঁর টুইট, ‘‘তৃণমূলের অপশাসন রুখে দিল আদালত। গণতন্ত্রের বিপুল জয় হল।’’
দিল্লিতে বিজেপির কিছু নেতা ঘরোয়া মহলে দাবি করছেন, ‘‘যাত্রা-ভঙ্গে কিছুটা শাপে বরই হল।’’ তাঁদের মতে, আজ না হয় কাল রাজ্যে রথযাত্রা হবেই। কিন্তু রথ আটকে দেওয়ায় যে প্রচারটা পাওয়া গেল, সেটা হয়তো রথযাত্রা হলে পাওয়া যেত না। এখন মমতাকে নিশানা করে প্রচারকে উচ্চগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল দল। যা আজ পুরোদস্তুর কাজে লাগালেন অমিত শাহ।
বস্তুত, রথযাত্রা আটকে দিয়ে তৃণমূল কার্যক্ষেত্রে বিজেপির সুবিধা করে দিল বলেই গত কয়েক দিন ধরে প্রচার করছে সিপিএম। তাদের অভিযোগ, তৃণমূল হল বিজেপি-ভক্ত। রামের কাছে যেমন হনুমান, বিজেপির কাছেও তৃণমূল তাই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মেরুকরণের হাত ধরে বিজেপির মতো ফায়দা লোটার অঙ্ক কষছে তৃণমূলও। যদিও এই গোটা বিতর্ক-পর্বে মুখে কুলুপ তৃণমূল নেতৃত্বের।