গবেষণার নামে ভয়ঙ্কর চিকিৎসা বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে

মানুষের উপরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য কোনও এথিক্যাল কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই) এবং ড্রাগ কন্ট্রোলও এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে অনুমোদন দেয়নি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪৭
Share:

মানুষের উপরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য কোনও এথিক্যাল কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই) এবং ড্রাগ কন্ট্রোলও এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু গবেষণার নাম করে খোদ কলকাতার বুকে একটি সরকারি হাসপাতালে মাসের পর মাস ধরে ক্ষত, পোড়া এবং ঘা নিয়ে আসা রোগীর চিকিৎসা চলছে এমনই এক চিকিৎসা পদ্ধতিতে।

Advertisement

কী সেই পদ্ধতি?

বেহালার বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের লেবার রুম থেকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড (মায়ের গর্ভে যে জলের মধ্যে শিশু থাকে) সংগ্রহ করে তা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্ষত, পোড়া এবং ঘা নিয়ে আসা রোগীর শরীরে। সংশ্লিষ্ট রিজেনারেটিভ মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক গবেষকদের দাবি, অ্যামনিওটিক ফ্লুই়ডে থাকা প্রতিষেধকে ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়।

Advertisement

খাস স্বাস্থ্য ভবন স্বীকার করেছে, এমসিআই এই ধরনের চিকিৎসা অনুমোদন করে না। এই ধরনের গবেষণার জন্য যে সব অনুমোদন প্রয়োজন, তার কিছুই ওই বিভাগের নেই।

আরও পড়ুন: জামিন রোখার অস্ত্র মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ

সব দেখেশুনেও তা হলে কেন এত দিন তারা চুপচাপ?

স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, বিদ্যাসাগর হাসপাতালের রিজেনারেটিভ মেডিসিন খোদ মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের বিভাগ। তাই কেউ তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু সম্প্রতি বিদ্যাসাগর হাসপাতালের সুপার চিঠি লিখে রোগীদের স্বার্থে এই ধরনের চিকিৎসা ও গবেষণা বন্ধের দাবি জানানোর পরে স্বাস্থ্য ভবন তোলপাড়। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী কী বলছেন? তাঁর মন্তব্য, ‘‘এথিক্যাল পারমিশন রয়েছে এমন বিষয় নিয়েই আমরা ওদের কাজ করতে বলেছিলাম। এখন শুনছি, নির্দেশ সম্পূর্ণ অমান্য হয়েছে। সুপারের চিঠি পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

হাসপাতাল সুপার নিজে কেন বন্ধ করে দেননি এই অনৈতিক কাজ? সুপার উত্তম মজুমদার বলেন, ‘‘বহু বার স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি। রিজেনারেটিভ মেডিসিনের চিকিৎসকদের বার বার হুঁশিয়ারি দিয়েছি। ওঁরা তোয়াক্কাই করেননি। দায়টা আমার ঘাড়ে চলে আসছিল। তাই আবার স্বাস্থ্য ভবনকে লিখেছি।’’

ওই চিঠি পাওয়ার পরে স্বাস্থ্য ভবন তদন্তে নেমেছে। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘গর্ভস্থ শিশুর মল-মূত্র মেশা দূষিত অ্যামনিওটিক ফ্লুইড রোগীদের দেহে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢোকানো হচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। যা মারাত্মক স্বাস্থ্য-সঙ্কট তৈরি করতে পারে।’’

বিদ্যাসাগর হাসপাতালের সুপারের মন্তব্য, ‘‘রিজেনারেটিভ মেডিসিন বিভাগে যা চলছে তাতে আমি আতঙ্কিত। স্বাস্থ্য ভবনের সাহায্যপ্রার্থী।’’এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘যাঁদের অ্যামনিওটিক ফ্লুই়ড ইঞ্জেকশন দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে, তাঁদের দেহে বিপরীত কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না, তা জানার কোনও উপায়ই নেই।’’

ওই বিভাগে গিয়ে দেখা গেল রোগীদের শরীরে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড দেওয়ার কাজ তত্ত্বাবধান করছেন মেডিক্যাল অফিসার মইনুদ্দিন নস্কর। এই চিকিৎসার কি কোনও অনুমতি রয়েছে? মইনুদ্দিনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোনও অনুমতি ছাড়াই করছি। যা পারেন করুন!’’

রিজেনারেটিভ মেডিসিন বিভাগের প্রধান নিরঞ্জন ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘আমাদের কোনও অনুমতি দরকার নেই। বৃহত্তর স্বার্থে এই গবেষণায় কিছু লোক অসুস্থ হলে হবেন। সেটা স্বাস্থ্য দফতর বুঝবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন