উদ্ভাবন নিয়ে শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র
ইচ্ছা ছিল একটা মোটরবাইক কেনার।
টাকা ছিল না। ছিল বুদ্ধি। উপায়টাও বাতলে নিলেন নিজে নিজেই। সাদামাটা সাইকেলটাকেই মোটরবাইক বানিয়ে ফেললেন রঘুনাথপুর আইটিআই-এর ছাত্র, বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ার শুভেন্দু কুচল্যান। যেমন তেমন বাইক নয়। ফেব্রুয়ারির শেষে রাজ্য কারিগরি শিক্ষা দফতর সরকারি এবং বেসরকারি আইটিআই, পলিটেকনিক কলেজগুলিকে নিয়ে হওয়া মডেল প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। সেখানে প্রথম হয়েছে শুভেন্দুর সেই বাহন।
প্রদর্শনীটি ছিল কলকাতার টালিগঞ্জে। রঘুনাথপুর থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত শুভেন্দুকে নিয়ে নিজের চাকাতেই গড়াতে গড়াতে গিয়েছে তাঁর সেই মোটরবাইক। ফলে কাজেকর্মে সেটি কেমন দঢ়, তা একেবারে পরীক্ষিত বলেই দাবি করেছেন বছর তেইশের যুবকটি। জানাচ্ছেন, আরও অনেক গুণ রয়েছে এই বাইকের। শুভেন্দু বলেন, ‘‘এটা মাল্টি ফুয়েল মোটরবাইক। কেরোসিন, পেট্রল, ডিজেল— সবেতেই চলবে।’’ এক লিটার কেরোসিনে পাড়ি দিতে পারবে প্রায় পঁচাশি কিলোমিটার। দূষণেরও বালাই নেই।
বাবার আছে সাইকেল মেরামতির ছোট্ট দোকান। টানাটানির সংসার। পড়াশোনার ফাঁকে বাবাকে সাহায্য করেন শুভেন্দু। যে সাইকেলটা ভোল বদলে মোটরবাইক হয়েছে, সেটিও নিজে নিজেই বানিয়ে ফেলেছিলেন বাবার দোকানে বসে। বলেন, ‘‘মোটরবাইক কেনার সাধ ছিল। কিন্তু অনেক দাম। কিনতে পারতাম না। তাই কম খরচে বানানোর কথাটা মাথায় আসে।’’ খরচ কত পড়ল? শুভেন্দু জানাচ্ছেন, মেরেকেটে হাজার পনেরো টাকা। সময় লেগেছে মাস ছয়েক। ইঞ্জিন তৈরি হয়েছে জেনারেটর, জলের পাম্প আর স্কুটারের যন্ত্রাংশ দিয়ে। লাগানো হয়েছে পাহাড়ে চড়ার বিশেষ এক ধরনের সাইকেলের শক্তপোক্ত চাকা।
রঘুনাথপুরর আইটিআইতে ‘ওয়েল্ডার ট্রেড’ পড়েন শুভেন্দু। বলছেন, ‘‘প্রিন্সিপাল স্যর না থাকলে এটা সত্যি সত্যি করা হয়ে উঠত না।’’ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আশিস মণ্ডল বলছেন, ‘‘এক দিন হঠাৎ ছেলেটা এসে হাজির। বলে, আমরা সাহায্য করলে নিজেই নাকি মোটরবাইক বানিয়ে ফেলবে। ওর কথায় জোর ছিল। সেটাই মুগ্ধ করে। বলেছিলাম, আমরা যতটা পারি সাহায্য করব।’’ আইটিআইতে বসেই মোটরবাইক বানিয়েছেন শুভেন্দু। যন্ত্রপাতিও পেয়ে গিয়েছেন সেখানেই। সাহায্য করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক চিত্তরঞ্জন মণ্ডল, বিমল পাঁজা ও সন্দীপ মজুমদার। তাঁরা বলছেন, ‘‘নকসা থেকে নানা খুঁটিনাটি ব্যাপার ও নিজেই করেছে। আমরা শুধু দরকার মতো পরামর্শ দিয়েছি।’’ ছাত্রের সাফল্যে খুশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘ওর মাল্টিফুয়েল মোটরবাইক টেকনোলজি বিভাগে রাজ্যে সেরা হয়েছে। ওকে আমরা সংবর্ধনা দেব।’’
সহজেই এই মোটরবাইককে ই-বাইক করে ফেলা যাবে, জানাচ্ছেন শুভেন্দু। শুধু ইঞ্জিন খুলে তার জায়গায় মোটর আর ব্যাটারি বসিয়ে দিতে হবে। সমস্ত বন্দোবস্ত তিনি করেই রেখেছেন। সরকারি সাহায্য পেলে বা কোন সংস্থা এগিয়ে এলে বাহনের টুকটাক ত্রুটি শুধরে বাজারে নিয়ে আসতে চান তিনি।