এক জায়গায় জমি কেনাই যায়নি। আর এক জায়গায় জমি কেনার পরেও মেলেনি ঊর্ধ্বসীমার ছাড়পত্র। তাই এ রাজ্যে দিনের আলো দেখছে না বামা লরির বহুমুখী লজিস্টিক্স হাব প্রকল্প। অথচ সেই একই সময়ের মধ্যে তারা জমি পেয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। হাতে এসেছে প্রয়োজনীয় সব ছাড়পত্রও। ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে বিশাখাপত্তনমে তাদের প্রকল্প চালু হয়ে যাবে বলে মঙ্গলবার সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।
মিনিরত্ন সংস্থা বামা লরি ২০১২ সালে জানিয়েছিল, কলকাতা বা তার সংলগ্ন অঞ্চল এবং বিশাখাপত্তনমে দু’টি লজিস্টিক্স হাব তৈরি করবে তারা। দু’জায়গাতেই সম্ভাব্য লগ্নির অঙ্ক ছিল ২৫০ কোটি টাকা।
এ রাজ্যে প্রথমে ডানকুনিতে হাব তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। ঠিক হয়, পণ্য মজুতের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম গড়া হবে সেখানে। কন্টেনারে পণ্য ওঠানো-নামানো, রেলের ওয়াগনে আসা পণ্য খালাস ইত্যাদির কাজও হবে। ২০১২ সালেই এ জন্য ৫০ একর জমি জোগাড় করে তারা। প্রাথমিক চুক্তি হয় জমির মালিকদের সঙ্গেও। কিন্তু এত দূর এগোনোর পরেও জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের গেরোয় ধাক্কা খায় পরিকল্পনা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও রাজ্যের কাছ থেকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার আইনের ১৪ ওয়াই ধারা মতে সিলিং অতিরিক্ত জমি রাখার অনুমতি না-পেয়ে শেষমেশ ডানকুনিতে প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনাই বাতিল করে দেয় তারা।
২০১৩ সালে ফের ওই প্রকল্প বাগনানে গড়ার কথা ভেবেছিল বামা লরি। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, ‘‘প্রস্তাব পাওয়ার পরেই ছাড়পত্র দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছি। সংস্থা কর্তৃপক্ষকে বলেছি, পুরো ৫৫ একর জমিতেই প্রকল্প শুরু করার অনুমোদন দেওয়া হবে।’’ অর্থাৎ জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন যে এ বার আর বাধা হবে না, তা স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাগনানে জমি-মালিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ৫০-৫৫ একর জমি কিনেই উঠতে পারেনি সংস্থা।
শিল্পমহল বলছে, এ রাজ্যের জমি নীতি যে কত অসার, বামা লরির ঘটনাই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এক দিকে শিল্পের জন্য এক ছটাক জমিও অধিগ্রহণ না করার জেদ ধরে বসে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পশ্চিমবঙ্গের মতো বহু জোতে বিভাজিত রাজ্যে অসংখ্য মালিকের সঙ্গে কথা বলে জমি কেনা যে শিল্পপতিদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব, সেটা বারবারই বলেছে শিল্পমহল। কিন্তু রাজ্য সরকারের টনক নড়েনি। ফলে গত চার বছরে রাজ্যে প্রায় কোনও শিল্পই হয়নি। বাগনানে পিছিয়ে আসতে হয়েছে বামা লরিকেও।
জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন নিয়েও আপত্তি রয়েছে শিল্পমহলের। তাদের বক্তব্য, এই আইন রাখারই কোনও দরকার নেই। যার উত্তরে রাজ্য সরকার আশ্বাস দিয়েছে, শিল্পপতিরা নিজেরা জমি কিনে নিলে ঊর্ধ্বসীমা আইন কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। কিন্তু ছাড় দেওয়ার বিষয়টি রাজ্যের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর কেন নির্ভর করবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এবং রাজ্যের আশ্বাস যে আদতে ফাঁকা, শিল্পপতিদের আশঙ্কাই ঠিক, ডানকুনিতে বামা লরির অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ।
এর উল্টো দিকে কী করেছে চন্দ্রবাবু নায়ডুর রাজ্য? সেখানে বামা লরিকে ৫০ একর জমি দিয়েছে সরকারই। তা বাজার দরে কিনেছে সংস্থাটি। জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের ঝক্কিও অন্ধ্রপ্রদেশে নেই। ফলে ২৫০ কোটির প্রকল্প তৈরি হতে চলেছে সেখানে। সংস্থার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রবাল বসুর কথায়, ‘‘ডানকুনিতে ৫০ একর জমির ব্যবস্থা নিজেরাই করেছিলাম। ২০১২ সালে রাজ্যের কাছে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের ১৪ ওয়াই ধারা মোতাবেক আবেদন করি। কিন্তু ২০১৩ সালে জানানো হয় যে, তা পাওয়া যাবে না। এর পরই অন্ধ্র সরকারের কাছে প্রকল্প গড়তে জমি চেয়ে আবেদন করি। তার ব্যবস্থাও হয়েছে। এ রাজ্যে সদর দফতর হওয়া সত্ত্বেও জমি-জটের কারণেই প্রকল্প গড়া গেল না এখানে।’’