ডিমের দাম বাড়তে বাড়তে ৭ টাকায় ঠেকেছে! কেন?

মাছেও রাজ্যের অর্ধেকের বেশি চাহিদা মেটায় অন্ধ্রপ্রদেশ। ডিমেও সেই অন্ধ্রপ্রদেশ আর তেলঙ্গানার উপরেই নির্ভর করতে হয় পশ্চিমবঙ্গকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৭
Share:

প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন নিগমের ২৬০টি বিপণন কেন্দ্রেই কম দামে ডিম বিক্রি হবে।

বাজারের থেকে কম দামে ডিম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। আজ, শনিবার থেকেই প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের অধীনে বিভিন্ন বিপণন কেন্দ্রগুলিতে ডিম পাঠানো শুরু হচ্ছে। যত দিন পর্যন্ত বাজারে ডিমের দামে নিয়ন্ত্রণ না-আসছে, তত দিন হরিণঘাটা-সহ সরকারের সুলভ মূল্যের দোকানগুলিতে মানুষ কম দামে ডিম কিনতে পারবেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

Advertisement

মাছেও রাজ্যের অর্ধেকের বেশি চাহিদা মেটায় অন্ধ্রপ্রদেশ। ডিমেও সেই অন্ধ্রপ্রদেশ আর তেলঙ্গানার উপরেই নির্ভর করতে হয় পশ্চিমবঙ্গকে। আর সেই জোগানে কোনও কারণে টান পড়লে রাজ্যের বাজারে মাছ ও ডিমের দামও বাড়ে। এ বছর ছট পুজোর পর থেকে হিন্দিভাষী রাজ্যগুলি-সহ দক্ষিণ ভারতেও ডিমের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এ রাজ্যে জোগানে টান পড়তে শুরু করেছে। ১৫ শতাংশের মতো চাহিদা বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। আর চাহিদার সঙ্গে ডিমের জোগানে ফারাক বাড়তেই নভেম্বরের শুরু থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের খুচরো বাজারগুলিতে ডিমের দাম বাড়তে বাড়তে ৬ টাকা ৫০ পয়সায় গিয়ে ঠেকেছে। বাজারের ঝোঁক যে দিকে ডিমের দাম ৭ টাকায় পৌঁছতে পারে বলে খুচরো বিক্রেতারা জানাচ্ছেন।

প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন নিগমের এক কর্তা জানান, প্রথমে কলকাতার ৬০টি বিপণন কেন্দ্রে শনিবার থেকে ভর্তুকির ডিম যেতে শুরু করবে। সোমবার থেকে জেলাতেও ডিম পাঠানো হবে। তাঁদের অধীনে থাকা ২৬০টি বিপণন কেন্দ্রেই কম দামে ডিম বিক্রি হবে বলে ওই কর্তা জানান।

Advertisement

আরও পড়ুন: রোজ খেলা রাজ্য লটারির, পুরস্কারও দেওয়া হবে দ্রুত

রাজ্যের পোলট্রি শিল্প মহলের তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে শীতের সময় প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটির মতো ডিমের প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে ৭৮ লক্ষের মতো ডিমের জোগান দেয় রাজ্যের সংগঠিত পোলট্রি খামারগুলি। এ ছাড়াও অসংগঠিত ক্ষেত্রে ছোট-খাট পোলট্রি খামার ও গ্রামাঞ্চলের উৎপাদন মিলিয়ে আরও ৭০ লক্ষ ডিম আসে রাজ্যের বাজারগুলিতে। চাহিদার বাকি পুরোটাই (প্রায় এক কোটির মতো) ডিম জোগান দেয় অন্ধ্রপ্রদেশ ও কিছুটা তেলঙ্গানা। আর এ বছর সেই অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানাতেও ডিমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজ্যের চাহিদার ফারাক কিছুটা থেকেই যাচ্ছে। বেশি ডিম চাইছে ঝাড়খণ্ড, ছত্তীশগঢ়, বিহার, উত্তরপ্রদেশও। ফলে অন্ধ্রপ্রদেশের পক্ষে সবার ডিমের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশেই ডিমের দাম এখন চড়ে গিয়েছে।

ন্যাশনাল এগ কোঅর্ডিনেশন কমিটির তথ্য অনুযায়ী পয়লা নভেম্বর কলকাতার পাইকারি বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ছিল ৪ টাকা ৫৬ পয়সার মতো। ১৭ নভেম্বর তার দাম বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ৫২ পয়সায়। অর্থাৎ গত ১৭ দিনে পাইকারি বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম বেড়েছে ৯৬ পয়সা। আর সেই ডিমই খুচরো বাজারে এসে কোথাও ৬ টাকা, কোথাও বা ৬ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৭২-৭৫ টাকা ডজনে মানুষকে ডিম কিনতে হচ্ছে। অথচ গত বছর এই নভেম্বর মাসেই রাজ্যের মানুষ গড়ে ৪৮ টাকা ডজন দরে ডিম কিনেছে বলে কোঅর্ডিনেশন কমিটির তথ্য জানাচ্ছে। আকাশ ছোঁয়া আনাজের দামের পাশাপাশি ডিমের এই চড়া দাম মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের কপালে ভাঁজ ফেলেছে।

প্রাণী-সম্পদ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, ডিমের উৎপাদন বাড়াতে চলতি অর্থবর্ষেই (২০১৭-’১৮) গ্রামাঞ্চলে ৬০ লক্ষ মুরগির ছানা বিতরণ করা হবে। যার মধ্যে ৪০ লক্ষ ছানা বিতরণ করা হয়ে গিয়েছে। ডিমের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশে উপর নির্ভরতা কমাতেই তাঁদের এই উদ্যোগ বলে মন্ত্রী দাবি করেছেন। তবে ডিমের এই দাম বৃদ্ধির জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনকেই অনেকাংশে দায়ী করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন