সভায় অনুব্রত। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরব হলেন বীরভূম জেলা সভাপতি তথা আউশগ্রাম-কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার বিকেলে আউশগ্রামের একটি সভা থেকে এমন ঘটনায় সরাসরি থানায় যাওয়ার বার্তাও দেন তিনি।
এ দিন সভার শুরুতে আউশগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলেন অনুব্রত। সেখানে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করার সময় তৃণমূলের নাম করে গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার বিষয়টি ওঠে। সভায় সেই প্রসঙ্গ তুলে অনুব্রতবাবু বলেন, ‘‘কয়েকজন অঞ্চল সভাপতিকে ডাকলাম। এক জন স্বীকার করল বাড়ি দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছে। আমি যাওয়ার সময় নামটা টগর (আউশগ্রাম ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সালেক রহমান)কে দিয়ে যাব। তাকে যেন গ্রেফতার করা হয়। পুলিশকে দিয়ে তাকে যেন গ্রেফতার করা হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আর এক সভাপতি বলল, কয়েকটা ছেলে টাকা নিয়েছে। ওকে যেন অঞ্চল সভাপতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’’ পরে সালেক রহমানের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি অবশ্য কারও নাম জানাননি। ব্লক সভাপতি শুধু বলেন, ‘‘এখন কিছু বলব না। সময় হলেই জানতে পারবেন।’’
আউশগ্রাম ১ ব্লকের দ্বারিয়াপুর গ্রামে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি দেওয়ার নামে ভয় দেখিয়ে, সই জাল করে উপভোক্তাদের কাছে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নামে। ওই আদিবাসীদের অভিযোগ, কাউকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হবে না বলে, কারও ব্যাঙ্কের খাতায় সই জাল করে টাকা তোলা হয়েছে। রানি হাঁসদা নামে এক বৃদ্ধাকে দু’টি গরু বিক্রি করে বাড়ি সম্পূর্ণ করতে হয়েছে। তাঁরাই জেলা প্রশাসনের অনগ্রসর দফতরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিডিও চিত্তজিৎ বসু তদন্তও করে গিয়েছেন। অনেকে মুখ্যমন্ত্রী বাড়ির ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েও বিষয়টি জানিয়েছিলেন। সে সব প্রসঙ্গে অনুব্রত দলীয় কর্মী-নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘ধরা পড়লে ক্ষমা করি না। চার দেওয়ালেই স্থান হবে। লজ্জা করে না, গরিব মানুষকে বাড়ি করে দেওয়ার নামে পাঁচ হাজার, দশ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে!’’ তাঁর নিদান, ‘‘কেউ টাকা চাইলে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই, সোজা থানায় গিয়ে চুপিচুপি অভিযোগ জানিয়ে আসুন। প্রয়োজন হলে আমার বাড়িও আসতে পারেন। অন্যায় করলে আমি কাউকে রেয়াত করি না।’’
সরকারি বাড়ি দেওয়ার নামে টাকা তোলা প্রসঙ্গে গুসকরা পুরসভার এক কাউন্সিলরকেও ইঙ্গিত করেন তিনি। অনুব্রতবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ইস্ত্রি করা জামকাপড় পড়লেই ভদ্রলোক হওয়া যায় না। কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন আমি জানি। সময় মত সেই তালিকা প্রকাশ করব।’’ সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ফাঁকা জমি পড়ে আছে। অনেক দিন চাষ হয়নি। পাঁচনের বাড়িতে জমি উর্বর করে দেবেন। ভয় পাবেন না। আমি আছি।’’
বিজেপির ধারনা, অনুব্রত ঘুরিয়ে ভোটের আগে তাঁদের কর্মীদের উপর হামলা চালানোর কথা বলসেন। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বর্ধমান) সন্দীপ নন্দীর দাবি, ‘‘আমরাও আমাদের ভাষাতে কথা বলতে পারি, আমরাও চাষ করতে জানি—সেটাও মনে রাখা দরকার তৃণমূলের।’’