Municipal Election

দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পঙেও গুরুঙ্গদের চিন্তায় ফেলল তৃণমূল

পাহাড়ে যে একটা পাল্টা হাওয়া বইছে, সেটা আগেই টের পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেই হাওয়া যে তৃণমূলকে এমন জায়গায় এনে দেবে, তা মোর্চা নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন কি?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ১২:২৪
Share:

বিমল গুরুঙ্গ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— ফাইল চিত্র।

পাহাড়ে যে একটা পাল্টা হাওয়া বইছে, সেটা আগেই টের পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেই হাওয়া যে তৃণমূলকে এমন জায়গায় এনে দেবে, তা মোর্চা নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন কি? প্রশ্নটা উঠছে। কারণ, প্রায় সাড়ে তিন দশক পর সমতলের কোনও দল পাহাড়ের পুর নির্বাচনে খাতা খুলল। শুধু তাই নয়, একটি পুরসভা দখলও করে ফেলল তারা।

Advertisement

দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক এবং কার্শিয়াং। পাহাড়ের এই চার পুরসভায় গত রবিবার নির্বাচন হয়। বুধবার সকালে ভোটের ফল সামনে আসতেই দেখা যায়, মোর্চার গড়ে দাঁত ফুটিয়েছে সমতলের ঘাসফুল। মিরিক পুরসভা তো রীতিমতো মোর্চার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। ওই পুরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ৬টি। আর মোর্চা পেয়েছে মোটে তিনটি। আগের বার সব ক’টি ওয়ার্ডই মোর্চার হাতে ছিল। কার্শিয়াং, দার্জিলিং এবং কালিম্পং— এই তিন পুরসভাতেও খাতা খুলেছে তৃণমূল। কার্শিয়াঙে ৩, দার্জিলিঙে ১ এবং কালিম্পঙে ২টি করে ওয়ার্ড নিজেদের ঝুলিতে পুরে পেলেছে তারা।

কিন্তু, এমনটা কেন হল?

Advertisement

বামেদের পর আক্ষরিক অর্থেই কোনও অপাহাড়ি রাজনৈতিক দল নিজেদের প্রভাব পাহাড়ের নির্বাচনী ফলে তেমন ভাবে ফেলতে পারেনি। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে প্রথমে সুবাস ঘিসিং এবং পরে বিমল গুরুঙ্গদের পাহাড়ি দলই স্থানীয় প্রশাসনে একক ভাবে ক্ষমতায় থেকেছে। কিন্তু, এ বার তার বদল ঘটিয়ে দিল তৃণমূল। রাজ্যে ইদানীং দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে বিজেপিকে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। তবে, পাহাড়ে কোনও পুরসভাতেই প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। সব ক’টি আসনই তারা জোটসঙ্গী মোর্চাকে ছেড়ে দিয়েছিল। মিরিকে খারাপ ফল হতে পারে বলে আভাসও দিয়েছিল মোর্চা। এ দিন মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুঙ্গ কারচুপির তত্ত্ব সামনে এনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মিরিকে আধ ঘণ্টায় গণনা শেষ কেন? কারচুপির অভিযোগে পুনর্গননা চাইব।’’ পাশাপাশি গণতন্ত্রের জন্য যে বিরোধীদের থাকা ভাল তা-ও মেনে নিয়েছেন গুরুঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘যাই হোক, বিরোধী থাকাটা গণতন্ত্রের পক্ষে ভাল। আমি তো আগেই বলেছিলাম পাহাড়ে বিরোধীরা এ বার কিছু পাবে। তবে, আমরা কাজ করে যাব।’’

আরও খবর
মিরিক-সহ চার পুরসভা তৃণমূলের, মোর্চার দখলে দুই, প্রায় নিশ্চিহ্ন জোট

তৃণমূল এই জয়ের জন্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কৃতিত্ব দিয়েছে। পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাস এ দিন বলেন, ‘‘উন্নয়নের মানদণ্ডেই নির্বাচন হয়েছে। সেই নিরিখেই মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।’’ একই কথা শোনা গিয়েছে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের উপর পাহাড়বাসী আস্থা রেখেছেন। দীর্ঘ দিন ধরেই পাহাড়ে বঞ্চনা রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিনের পর দিন পাহাড়ে ছুটে গিয়েছেন তারই প্রতিফলন মিরিকে ঘটেছে।’’


দার্জিলিঙে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী।— নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল দীর্ঘ দিন ধরেই পাহাড়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছিল। মিরিককে মহকুমা বা কালিম্পংকে আলাদা জেলা ঘোষণা করার মধ্যেই সেই উদ্যোগ টের পাওয়া যাচ্ছিল। প্রশাসনিক এই উদ্যোগের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বার বার বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ে ছুটে গিয়েছেন। পাহাড়ি জনজাতিদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ঘোষণা করেছেন। সে সবই এ বারের নির্বাচনে কাজে দিয়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন