Terracota

Archaeological Survey of India: দেড় হাজার বছর আগের অন্তরঙ্গ গৃহকোণের দৃশ্য

পোড়ামাটির পুঁতি, কোনও কিছু ঝুলিয়ে রাখার জন্য শিকলি, মূল্যবান কিছু রত্ন ও হাতির দাঁতের তৈরি জিনিসপত্রও পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

অলখ মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২২ ০৭:৩৯
Share:

পোড়ামাটির সেই ফলক। নিজস্ব চিত্র।

শুধু একটি সম্পন্ন নাগরিক সমাজই নয়, বেশ সুখী গৃহস্থের ঘরের ছবিও উঠে এল উত্তর ২৪ পরগনার চন্দ্রকেতুগড়ের খনা-মিহির বা বরাহ-মিহির ঢিবি বলেও পরিচিত প্রত্নস্থলের গা ঘেঁষে। প্রাক-মৌর্য থেকে পাল যুগ বা তারও পরবর্তী সময়ে এখানে একটি সমৃদ্ধ জনপদই ছিল বলে পুরাতত্ত্ববিদদের অনুমান। এই এলাকা বন্দর নগরী ছিল বলে তাঁরা মনে করেন। এ বার ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের খননকার্যে সেখানে মিলল ইটের তৈরি একটি বড় দেওয়াল।

Advertisement

মাটি থেকে প্রায় ১.২ মিটার নীচে খুঁজে পাওয়া পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত প্রায় ছ’মিটার লম্বা এই দেওয়ালের দুই মুখই দক্ষিণ দিকে ঘোরানো। ইটগুলি চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার করে মোটা, ২০-২৫ সেন্টিমিটার করে লম্বা। দেওয়ালটি সংস্কার করা হয়েছিল বলেই পুরাতত্ত্ববিদদের মনে হচ্ছে। পুরাতত্ত্ববিদদের ধারণা, এই দেওয়াল থেকে এক টানা একটি সভ্যতার বিবরণই প্রকাশিত হচ্ছে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা সার্কেলের অধিকর্তা শুভ মজুমদার বলেন, ‘‘দেওয়ালটি পরীক্ষা করে মনে হচ্ছে, সম্ভবত গুপ্ত পরবর্তী যুগের অর্থাৎ খ্রিস্টীয় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকের কোনও স্থাপত্যের অংশ। যা সংস্কার করা হয়েছিল পাল যুগে বা খ্রিস্টীয় নবম-দশক শতকে।’’

শুধু তাই নয়, এখান থেকে মিলেছে পোড়ামাটির কাজে ধরা এক খণ্ড অন্তরঙ্গ গৃহকোণের দৃশ্যও। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি পুরুষ ও একটি মহিলা বসে রয়েছেন। পুরুষটি সম্ভবত মহিলার চুল বেঁধে বা আঁচড়ে দিচ্ছেন। শুভ বলেন, ‘‘এই পোড়ামাটির ফলকটির বয়স আনুমানিক খ্রিস্টীয় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতক।’’ সম্ভবত ঘর সাজানোর জন্য এমন ফলক তৈরি হত ও ক্রয়-বিক্রয় হত। ধারণা করা হচ্ছে এমন।

Advertisement

এখান থেকে পাওয়া গিয়েছে, হাতে কাপড় বোনার জন্য ব্যবহার করা হত এমন টাকু। পোড়ামাটির তৈরি টাকুটি অবশ্য ভেঙে গিয়েছে। মিলেছে, পোড়ামাটির পুঁতি, কোনও কিছু ঝুলিয়ে রাখার জন্য শিকলি, মূল্যবান কিছু রত্ন ও হাতির দাঁতের তৈরি জিনিসপত্র। লাল বা কৃষ্ণ কৌলালের ভগ্নাবশেষও পাওয়া গিয়েছে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক রজত সান্যাল জানিয়েছেন, ‘‘আমরা সাধারণত বরাহ-মিহিরের ঢিবি বা খনা-মিহিরের ঢিবির মন্দিরের খণ্ডচিত্র দেখতেই অভ্যস্ত। এএসআই-এর এই নতুন খননের উদ্যোগে যেমন ত্রিরথ মন্দিরটির ভুমি নকশা স্পষ্ট হয়েছে, তেমনই তার পাশের জনবসতির চরিত্রও কিছুটা বোঝা সম্ভব হল। এখানে আরও বিস্তৃত খননের অপেক্ষায় থাকছি।’’ শুভ জানাচ্ছেন, আরও ব্যাপক ভাবে অনুসন্ধানের জন্য এ বছরই উদ্যোগী হবেন তাঁরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন