State News

পুলিশে আস্থা নেই, ঘেরাওমুক্তির পরে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে শহরে ফিরলেন শোভনরা

রবিবারই সপরিবার রায়চক গিয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে গিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ২১:৪৭
Share:

সপরিবারে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায় রায়চকে যে বাংলোয় তাঁরা উঠেছেন, রবিবার রাত থেকেই দুষ্কৃতীরা সেটিকে ঘিরে নিয়েছে বলে অভিযোগ।—ফাইল চিত্র।

তৈরি হয়েছিল বড়সড় সঙ্কট। তার জেরে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় রায়চকে আটকে থাকতে হল শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অবশেষে পুলিশ এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতায় ফিরলেন তাঁরা।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়চকে শোভন ও বৈশাখী ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন। রবিবার রাত থেকে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাংলোটিকে ঘিরে রেখেছিল এবং অশ্রাব্য গালিগালাজ করা চলছিল বলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ। ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা করেননি বলেও তাঁর দাবি।

রবিবারই সপরিবার রায়চক গিয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে গিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। রায়চকে যে বাংলোয় তাঁরা ছিলেন, রবিবার রাত থেকেই দুষ্কৃতীরা সেটিকে ঘিরে নেয় বলে অভিযোগ। সোমবার বাংলোয় আটকে থাকাকালীন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘রবিবার রাত থেকে বাংলো ঘিরে ধরে গালিগালাজ চলছে। সোমবার সকাল থেকে আরও বেশি লোকজন পাঠানো হয়েছে। তারা অকথ্য গালিগালাজ করছে, জঘন্য হুমকি দিচ্ছে এবং বার বার শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এবং আমাকে বাইরে বেরতে বলছে।’’

Advertisement

সোমবার সকাল থেকে একাধিক বার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে বৈশাখীর দাবি করেন। স্থানীয় থানার (রামনগর) ওসি বা ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার এসপি, কেউই পদক্ষেপ করেননি বলে তাঁর অভিযোগ। শোভন চট্টোপাধ্যায় অবেশেষে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন বলে শোভনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। প্রথমে ওই আধিকারিক ফোন না ধরলেও সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ তাঁর সঙ্গে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভনের কথা হয় বলে ওই সূত্রটির দাবি।

এই সেই বাংলো।—নিজস্ব চিত্র।

পরে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রে জানা যায়, এ বিষয়ে জেলার যে নির্বাচনী আধিকারিক দায়িত্বে রয়েছেন, তিনিই যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: কলকাতায় বিস্ফোরক, ওড়িশা থেকে ধৃত বিক্রেতা

ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার এসপি সেলভা মুরুগানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে জেলার অন্য এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘প্রাক্তন মন্ত্রীর ফোন আমরা পেয়েছি। আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। রামনগর থানার অফিসাররা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। ’’

আরও পড়ুন: দমদমে রাস্তার উপর মত্ত যুবকদের তাণ্ডব, প্রহৃত শিক্ষক দম্পতি

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। সোমবার ফোনে তিনি বলেন, ‘‘বাংলোর গেট খোলা যাচ্ছে না। আমার বৃদ্ধা মা আর নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে আটকে রয়েছি। বাংলোয় খাবার নেই, জল নেই। মাত্র তিন জন পুলিশকর্মীকে পাঠানো হয়েছে। আর দেড়শো সশস্ত্র দুষ্কৃতী এলাকাটাকে ঘিরে রয়েছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কতটা অগণতান্ত্রিক পরিবেশে আমরা বাস করছি! আমার রাজনৈতিক গতিবিধি নিয়ে একটা গুজব ছড়িয়েছে মাত্র। তাতেই এত কিছু ঘটে যাচ্ছে।’’

সোমবার রাতে মাত্র তিন জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাংলোটির সামনে মোতায়েন করা হয়েছিল বলে শোভন ঘনিষ্ঠদের দাবি। বেহালা পূর্বের বিধায়ক তাতে বেশ ক্ষুব্ধ। সোমবার রাত গভীর হওয়ার পর থেকে দুষ্কৃতীদের জমায়েত কমতে থাকে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দৃশ্যত আর কোনও উপদ্রব ছিল না বলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। পুলিশও আগের চেয়ে কিছুটা বেশি সক্রিয় হয়েছিল। তবে রবিবার থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত যে পরিস্থিতির সাক্ষী তাঁদের হতে হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে পুলিশি বন্দোবস্ত যৎসামান্যই ছিল বলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ। তাই শোভন চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার কলকাতা থেকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের। মূল তাঁদের ঘেরাটোপেই শোভন এবং সপরিবার বৈশাখী রায়চক ছাড়েন। বিকেল নাগাদ কলকাতায় পৌঁছন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন