অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস
বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করে দুই মত্ত যুবকের হাতে মার খেলেন শিক্ষক দম্পতি। দমদম স্টেশনের পাশে দমদম রোডের উপর ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতে। অভিযোগ, পথচলতি মানুষ মত্তদের রোখার চেষ্টা করলে তাঁদের উপরেও চড়াও হয় ওই যুবকেরা। ওই দুই যুবকদের একজন নিজেকে শাসকদলের নেতা বলেও দাবি করেন। সোমবার বিকেলে অন্যতম অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের নাম অরিন্দম দাস। দমদম এলাকারই বাসিন্দা।
কালিন্দির বাসিন্দা পঙ্কজ দেবনাথ সপরিবারে দমদমের বেদিয়াপাড়ায় গিয়েছিলেন একটি বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। সেখান থেকে ফেরার পথে যে এ রকম অভিজ্ঞতা হবে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। সোমবার দুপুরে ফোনে কথা বলার সময়েও তাঁর গলায় আতঙ্কটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। এ দিন পঙ্কজবাবু বলেন, “তখন রাত পৌনে ১১টা। স্ত্রী, বৃদ্ধা মা এবং কোলে চার বছরের ছেলেকে নিয়ে দমদম রোডের আন্ডারপাস ধরে হাঁটছি। হঠাৎই পিছন থেকে একটা গাড়ি ধাক্কা মারল।” পঙ্কজবাবু বলেন, “ওখানে রাস্তা ভাঙা। গাড়ি খুব একটা জোরে যেতে পারে না। আমি কোলে থাকা ছেলেকে নিয়ে পাশের রেলিংয়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ি।” পঙ্কজবাবুর অভিযোগ, ক্ষমা চাওয়া দূরে থাক, উল্টে গাড়ি থেকে চালক এবং তাঁর সঙ্গী নেমে তাঁকে ধমকাতে থাকেন।
কোনও মতে নিজেকে সামলে গাড়ির খোলা জানলার দিকে এগিয়ে পঙ্কজবাবু প্রতিবাদ জানান। দমদম থানায় লিখিত অভিযোগে পঙ্কজবাবু জানিয়েছেন, গাড়ির দিকে এগোতেই তাঁকে গালিগালাজ করা হয়। তখন তিনি গাড়ির সামনের দরজার হ্যান্ডেল ধরে চালক এবং সঙ্গীকে নেমে আসতে বলেন। তাঁর অভিযোগ, “গাড়ির কাছে যেতেই আমি মদের গন্ধ পাই। দু’জনেই মত্ত অবস্থায় ছিলেন।”
আরও পড়ুন: ভোটে হিংসা রুখতে কড়া কমিশন, গোটা রাজ্যে ৬০ হাজার অভিযুক্ত এখনও অধরা
ওই দুই যুবক নামতেই পথচলতি কিছু মানুষও এগিয়ে আসেন এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ, ওই সময় দুই যুবক পঙ্কজবাবুকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেন। সেই সময় তাঁর স্ত্রী বাধা দিতে গেলে তাঁকেও ধাক্কা মারেন ওই দুই যুবক। ওই যুবকদের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে চশমা ভেঙে চোখেও আঘাত পান পেশায় শিক্ষক পঙ্কজবাবু। অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, সেই সময় পথচলতি মানুষ ওই যুবকদের ঘিরে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। অনেকেই ঘটনাটার ভিডিয়ো করেছিলেন। তখন দুই যুবকের একজন নিজেকে শাসকদলের নেতা হিসাবে পরিচয় দেন। তিনি কয়েক জনের ফোন কেড়ে রেকর্ডিং করা ভিডিয়ো মুছেও দেন বলে অভিযোগ।
ততক্ষণে পথচলতিদের একজন ফোন করে দমদম থানায় ফোন করে খবর দেন। এরই মধ্যে গাড়ি রাস্তার পাশে রাখার নাম করে বেশ জোরে গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যান ওই দুই যুবক।পঙ্কজবাবু এ দিন ফোনে বলেন, “দমদম খানার পুলিশ আমাদের থানায় নিয়ে যান। আমি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। সেই সময় পথচলতি লোকজনও ছিলেন। তাঁরাই ওই লাল মারুতি ভ্যানের নম্বর এবং দুই যুবকের ছবি পুলিশকে দেন।” এ দিন শ্যামনগরের স্কুল থেকে ফেরার পথে পঙ্কজবাবু বলেন,‘‘থানায় যাওয়ার পথে দেখি, মায়ের গলায় থাকা একটা সোনার চেনও গায়েব।’’
আরও পডু়ন: ইভিএম-এ প্রার্থীর ছবি, এ বার ভোটে নতুন আর কী কী চালু করল কমিশন
রাতের ওই আতঙ্ক নিয়েই এ দিন পঙ্কজবাবুর মতো তাঁর স্ত্রী চাঁদপাড়ায় স্কুলে গিয়েছেন। সেখানে একটি স্কুলে তিনি অঙ্কের শিক্ষিকা। ফোন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “দমদম রোডের উপর এত মানুষের সামনে এ ভাবে মত্ত যুবকদের তাণ্ডবের মুখে পড়তে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।”
পুলিশ সূত্রে খবর, তারা গাড়িটি চিহ্নিত করেছে। গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া ছবি এবং ভিডিয়োর সাহায্যে অরিন্দমকে পাকড়াও করা হয়।
(শহরের সেরা খবর, শহরের ব্রেকিং নিউজ জানতে এবং নিজেদের আপডেটেড রাখতে আমাদের কলকাতা বিভাগ পড়ুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy