গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির হুকুমেই আড়ালে গুরুঙ্গরা

মদন তামাঙ্গ খুনের মামলায় বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরি-সহ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ২৩ জন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিল কলকাতা নগর দায়রা আদালত। সিবিআইয়ের এসপি ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবেন। শনিবার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক গোপালচন্দ্র কর্মকার এই নির্দেশ দেন। তিনি জানান, ২৬ জুনের মধ্যে পরোয়ানা কার্যকর করতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৫ ০৩:৫২
Share:

খুনের ঘটনাস্থলে স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন মদন তামাঙ্গের স্ত্রী ভারতীদেবী। ছবি: রবিন রাই।

মদন তামাঙ্গ খুনের মামলায় বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরি-সহ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ২৩ জন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিল কলকাতা নগর দায়রা আদালত। সিবিআইয়ের এসপি ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবেন। শনিবার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক গোপালচন্দ্র কর্মকার এই নির্দেশ দেন। তিনি জানান, ২৬ জুনের মধ্যে পরোয়ানা কার্যকর করতে হবে।

Advertisement

আদালতের নির্দেশ জানার পরে গুরুঙ্গ-সহ মোর্চার শীর্ষ নেতারা কেউই এ দিন প্রকাশ্যে আসেননি। তবে দলের তরফে জানানো হয়েছে, সোমবারই আগাম জামিনের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। আদালতের নির্দেশের কথা জেনে নিহত মদন তামাঙ্গের স্ত্রী ভারতীদেবী দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘‘দোষীদের শাস্তি হোক, এটাই গোটা পাহাড় চাইছে।’’ সিবিআইয়ের এক সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, ২৬ জুনের মধ্যে সকলকে গ্রেফতার করা না গেলে সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি জানানো হতে পারে।

দার্জিলিঙে মোর্চার সদর দফতরে বিকেলেই পৌঁছে যায় আদালতের নির্দেশের খবর। বিমল গুরুঙ্গ-সহ মোর্চার প্রথম সারির নেতারা পাতলেবাসের অফিসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তবে দলের ওই প্রথম সারির নেতাদের কেউই সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির হননি। জিটিএ অফিস কিংবা শহরের কোথাও তাঁদের দেখাও যায়নি। যদিও বিমল গুরুঙ্গের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রাজ্য পুলিশের অফিসার ও কর্মীরা পাতলেবাস ও সিংমারিতে যথারীতি

Advertisement


বিমল গুরুঙ্গের মেয়ে আইনজীবী নন্দা গুরুঙ্গ। শনিবার নগর দায়রা আদালতে রণজিৎ নন্দীর ছবি।

নজরদারি চালিয়েছেন। সন্ধেয় মোর্চার আইনি শাখার মুখপাত্র রিগেন লামা বলেন, ‘‘সোমবারই আগাম জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’

অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ (এবিজিএল)-এর দাবি, দ্রুত আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে হবে। এবিজিএল-এর সভানেত্রী ও মদন তামাঙ্গের স্ত্রী ভারতী দেবী বিকেলে স্বামীর সমাধিতে ফুল দিয়ে মোম জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের অনেক মানুষের সামনে যে ভাবে ওঁকে (মদন তামাঙ্গ) খুন করা হয়েছে তার চেয়ে ভয়ঙ্কর ও নৃশংস কিছু হয় না। যাঁরা খুনে যুক্ত, তাঁদের সিবিআই চিহ্নিত করেছে। আদালত গ্রেফতারও করতে বলেছে। এ বার ওঁদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার শুরু হোক।’’

এ দিন বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ মামলার শুনানির শুরুতেই সিবিআইয়ের আইনজীবী অরুণ ভগত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আর্জি জানান। তাঁর বক্তব্য ছিল, সিবিআই গত ২৯ মে এই মামলায় দ্বিতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট ও সামগ্রিক রিপোর্ট পেশ করেছে আদালতে । তাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হোক এ বার।

মোর্চা নেতাদের আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় ও সায়ন দে এর বিরোধিতা করেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট ও চার্জশিট পেশের আগেই গ্রেফতারির নির্দেশ দিলে জটিলতা তৈরি হবে। কারণ, শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই সিবিআই নতুন করে তদন্ত করেছে।

প্রথম অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়ার পরই ভারতী তামাঙ্গ সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। মামলার শুনানি ও বিচার প্রক্রিয়া দার্জিলিং জেলা আদালত থেকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে স্থানান্তর করার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে পুনরায় তদন্ত করে চার্জশিট এবং সামগ্রিক রিপোর্ট দিতে বলেছিল। সেই রিপোর্ট ও চার্জশিট কলকাতার আদালতের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টেও জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। সন্দীপনবাবু জানান, সুপ্রিম কোর্টে এখন গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। ফলে এই রিপোর্ট ও দ্বিতীয় চার্জশিট সেখানে জমা পড়েনি। এই অবস্থায় কলকাতা দায়রা আদালত তড়িঘড়ি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতেই পারে। কিন্তু তাতে পরে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কলকাতা দায়রা আদালতের মতপার্থক্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। তাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ আপাতত স্থগিত রাখার আর্জি জানান তাঁরা। এরই পাশাপাশি মোর্চা নেতাদের আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন, ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নিকল তামাঙ্গ ও দীনেশ সুব্বাকে ধরার ব্যাপারে সিবিআই কী করছে? দায়রা আদালতের বিচারক অবশ্য তাঁদের আর্জি মানেননি।

২০১০-এর ২১ মে দার্জিলিঙের ক্লাবসাইড রোডে অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ সভাপতি মদন তামাঙ্গকে কুপিয়ে খুন করা হয়। ঘটনার অন্যতম মূল অভিযুক্ত নিকল তামাঙ্গকে ওই বছরেরই ১৬ অগস্ট গ্রেফতার করে সিআইডি। কিন্তু ছ’দিনের মাথায় শিলিগুড়ির পিনটেল ভিলেজে সিআইডির হেফাজত থেকেই পালিয়ে যায় নিকল। তার আর খোঁজ মেলেনি। গ্রেফতার হয়নি আর এক মূল অভিযুক্ত দীনেশও। নিকল পালিয়ে যাওয়ার ৮ দিনের মাথায় মদন তামাঙ্গ হত্যাকাণ্ডে ৩১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল সিআইডি।

কিন্তু সিআইডির তদন্তে খুশি না হয়ে মদনের স্ত্রী ভারতী তামাঙ্গ কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত চেয়ে আর্জি জানান। ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ মেনে তদন্ত শেষে সিবিআই যে অতিরিক্ত চার্জশিট দাখিল করে, তাতে ওই ৩১ জনের নামই রাখা হয়। এর পর সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ এনে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিশেষ দল (সিট) গঠনের আর্জি জানান ভারতী। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পুনরায় তদন্ত ও সামগ্রিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সিবিআইকে।

মদন তামাঙ্গ খুনের প্রত্যক্ষদর্শী তথা অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ প্রধান ও মদনের স্ত্রী ভারতী তামাঙ্গ এই মামলায় মূল অভিযোগকারী। এ দিন শুনানির শুরুতেই তাঁদের আইনজীবী অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও ইন্দ্রনীল রায় সিবিআইয়ের জমা দেওয়া সামগ্রিক রিপোর্টের প্রতিলিপি চেয়ে আবেদন জানান। রিপোর্টের প্রতিলিপি চান অভিযুক্তদের আইনজীবীরাও। এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন আগের চার্জশিটে নাম থাকা ৩১ জনের মধ্যে ২৫ জন অভিযুক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন