বিজ্ঞানীরা সতর্ক করা সত্ত্বেও আর্সেনিক অধ্যুষিত এলাকায় অগভীর নলকূপের জল দিয়ে চাষ যেমন হচ্ছে, তেমন চাল সিদ্ধও করা হচ্ছে ওই জলে। তার ফলে সিদ্ধ চালে আর্সেনিকের পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রেই ২০০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় জানা গিয়েছে। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা-পত্রিকা ‘কেমোস্ফিয়ার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের গবেষকদের দাবি, উৎপাদিত ধানে আর্সেনিকের পরিমাণ কম থাকলেও, পরবর্তীকালে তাতে আর্সেনিকের পরিমাণ কী ভাবে বাড়ছে, সেই কারণ তাঁরা বার করতে পেরেছেন। ওই বিভাগের অধিকর্তা তড়িৎ রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, আর্সেনিক অধ্যুষিত এলাকায় নলকূপ এবং অগভীর নলকূপের জলে ধান সিদ্ধ করা হচ্ছে। সেই দূষিত জল থেকে আর্সেনিক ঢুকে পড়ছে চালের মধ্যে। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই সিদ্ধ চালে শতকরা ২০০ ভাগেরও বেশি আর্সেনিক পেয়েছি। মাঠ থেকে তোলা চালে যেখানে প্রতি কিলোগ্রামে ৬৬ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকে, সেখানে সিদ্ধ হওয়া সেই চালে প্রতি কেজিতে ১৮৬ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিক পেয়েছি।’’
তড়িৎবাবু বলেন, আর্সেনিক অধ্যুষিত এলাকায় যে চাল উৎপাদন হচ্ছে, তা বিক্রি হচ্ছে সারা রাজ্যে। ফলে যে সব এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক মাত্রার আর্সেনিক নেই, তাঁরাও পরোক্ষে আর্সেনিক দূষণের শিকার হচ্ছেন।
বিভিন্ন গবেষণায় ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, আর্সেনিক-দূষিত জল জমিতে থাকলে ধান গাছ অতি দ্রুত আর্সেনিক টেনে নেয়। ওই গবেষকেরা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দেগঙ্গায় ১০ টি মাঠে থাকা ধান গাছের উপরে গবেষণা করে দেখেছেন, জীবনের তিনটি পর্যায়ে ধান গাছে আর্সেনিক টেনে নেওয়ার ক্ষমতা ঘন ঘন পরিবর্তিত হয়। ধান গাছ যখন পোঁতা হয়, তার পরপরই শিকড় দ্রুত আর্সেনিক শোষণ করে। গাছ বড় হয়ে গেলে আর্সেনিক শোষণ ক্ষমতা কমে যায়। ফের যখন গাছে ধান হয়, তখন আর্সেনিকের শোষণ ক্ষমতা বাড়ে ।
তড়িৎবাবু বলেন, ‘‘দ্বিতীয় পর্যায়েগাছের শিকড়ে লোহার আস্তরণ তৈরি হয়। সেই আস্তরণই বেশির ভাগ আর্সেনিক শোষণ করে। গাছে কম আর্সেনিক পৌঁছয়। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে সেই লোহার আস্তরণ ক্রিস্টালে রূপান্তরিত হয় এবং ভেঙে যায়। ফলে গাছ সরাসরি আর্সেনিক শোষণ করতে থাকে। ওই আস্তরণকে ক্রিস্টালে পরিণত হওয়া থেকে আটকানো গেলে ধানের মধ্যে কম আর্সেনিক পৌঁছবে।’’ ভরসা সেই ভবিষ্যতে!
(শেষ)