Gangasagar Mela

সাগরমেলার জাতীয় তকমা: প্রশ্নে রাজ্যও

প্রশাসন সূত্রে খবর, জাতীয় মেলার মাপকাঠি সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশিকা নেই। তবে মেলাটিকে অবশ্যই সরকারি অনুমতিপ্রাপ্ত হতে হবে। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনও বিভাগের অনুমোদন থাকতে হবে।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

সাগর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩২
Share:

গঙ্গাসাগরে জনসমাগম। —ফাইল চিত্র।

সাগরমেলার উদ্বোধনে এসে এই মেলায় কুম্ভমেলার মতো অর্থ সাহায্য না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্য সরকারও যে সাগরমেলাকে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তৎপর হয়নি, সে কথাও জানা যাচ্ছে প্রশাসন সূত্রেই। রাজ্যের আর এক জাতীয় মেলা, বিষ্ণুপুর মেলাতেও মেলে না কেন্দ্রীয় সাহায্য। তবে তকমা থাক বা না থাক, সাগরে যে এখনও জাতীয় স্তরের পর্যটনস্থলের মতো সারা বছরের পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি, তা বোঝা যায় মেলা ছাড়া অন্য সময়ে এলেই।

Advertisement

কথায় বলে সব তীর্থ বার বার, সাগরমেলা এক বার। কিন্তু সাগরে যাতে বছরভর পুণ্যার্থীরা আসতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও রাজ্য সরকার করেছে বলে উদ্বোধনে এসে জানান মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা অবশ্য বলছে, মেলার সময় ছাড়া অন্য সময়ে সাগরদ্বীপে ন্যূনতম পরিকাঠামোও থাকে না। তাই মেলায় প্রচুর জনসমাগম হলেও কুম্ভের মতো জাতীয় উৎসবের স্বীকৃতি সাগরমেলা পায়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, জাতীয় মেলার মাপকাঠি সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশিকা নেই। তবে মেলাটিকে অবশ্যই সরকারি অনুমতিপ্রাপ্ত হতে হবে। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনও বিভাগের অনুমোদন থাকতে হবে। মেলায় বিভিন্ন ভাষার ও বিভিন্ন রাজ্যের শিল্পী বা পর্যটকদের মেলবন্ধন হতে হবে। পরিবেশ দূষণের নিয়ম-নীতি মেনে মেলা হতে হবে। অগ্নি নিরাপত্তা, শব্দদূষণ রোধের বন্দোবস্তও থাকতে হবে।

Advertisement

পর্যটন, সংস্কৃতি বা কোনও বিশেষ জাতির ঐতিহ্যের মতো বিষয়কে তুলে ধরলে সেই মেলাকে পর্যটন, তথ্য সংস্কৃতি বা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর সরকারি ভাবে মান্যতা দেয়। সেই মান্যতা পেলেই সরকারি অর্থ মেলার বাজেটে যুক্ত হয়। যেমন, বিষ্ণুপুর মেলাকে রাজ্য পর্যটন দফতর নোটিফায়েড করে বছর সাত-আট আগে। একই ভাবে কেন্দ্রীয় কোনও মন্ত্রকও কোনও মেলার বিশেষত্বকে স্বীকৃতি দিলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় দফতরের তহবিল আসবে। বিষ্ণুপুর মেলায় কেন্দ্রের কোনও অর্থ সাহায্য আসে না। তবে রাজ্য কেন সাগরমেলাকে নোটিফায়েড করেনি, সেই প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়েরা।

জাতীয় স্তরের পর্যটনক্ষেত্র প্রয়াগরাজ বা হরিদ্বারের সঙ্গেও তুলনায় গঙ্গাসাগর আসতে পারবে না বলে দাবি স্থানীয়দের অনেকের। তাঁদের ব্যাখ্যা, সাগরে মূল সমস্যা যাতায়াত। মুড়িগঙ্গা নদীতে নাব্যতা না থাকায় সারা বছর ভেসেল যাতায়াতে সমস্যা হয়। সাগরমেলার সময় ড্রেজ়িং করে পলি সরাতে প্রশাসনের যে তৎপরতা দেখা যায়, তা বছরের অন্য সময় চোখে পড়ে না বলেই দাবি। সাগরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস বলেন, ‘‘নাব্যতা ঠিক করতে প্রতি বছর যে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, তার সঙ্গে আর কিছু টাকা জুড়লেই সেতুর প্রাথমিক কাজ শুরু করা যায়।’’

এলাকার বড় সমস্যা ভাঙনও। তা রুখতে কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই বলেও দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দিঘায় সমুদ্রপাড় যে ভাবে তৈরি করা হয়েছে, তা এখানে হয়নি। ফলে, পাড় ভাঙা রোধ করা যাচ্ছে না। কোটি কোটি টাকা জলে যাচ্ছে। ভাঙনের কবলে পড়তে পারে কপিলমুনির মন্দিরও।’’

দিনের শেষ তাই হাতে থাকে রাজনৈতিক তরজা। এ বারও মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘কুম্ভমেলার থেকেও বড় এই মেলা। অথচ কুম্ভের জন্য আর্থিক সাহায্য করলেও গঙ্গাসাগর মেলার জন্য এক পয়সাও দেয় না কেন্দ্র।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পাল্টা বলেন, ‘‘আগে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করুন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগান। তার পর আমরা প্রয়োজন হলে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানাব গঙ্গাসাগরে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য।’’

এ দিন বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও বলেন, ‘‘কেন্দ্র কুম্ভমেলাকে যে সাহায্য ও সহযোগিতা করে, তা গঙ্গাসাগর পায় না। কেন? মেলাকে আলাদা ভাবে স্বীকৃতি দিক বা না-দিক সব আর্থিক দায়িত্ব বহন করে রাজ্য সরকারই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সারা দেশ থেকে আসা পুণ্যার্থীদের জন্য কেন্দ্র এই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না।’’

রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক থেকে এলাকার বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা জানিয়েছেন, গত এক বছর ধরে গঙ্গাসাগর মেলার পরিকাঠামো নিয়ে কাজ করেছে প্রশাসন। পার্থের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নজরদারিতে সেচ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, পঞ্চায়েত, পূর্ত, স্বাস্থ্য দফতর সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা করে পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে।’’ ড্রেজ়িংয়ে যে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়, সেটা মেনে নেন পার্থ। বঙ্কিম দাবি করেন, জাতীয় স্বার্থে মুড়িগঙ্গার উপরেও সেতু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন