বামেদের দখলে থাকা শহরের ওয়ার্ডগুলিতে বিরোধীদের ‘সরকারি ভাবে’ যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হবে বলে দাবি করলেন মেয়র পদের দাবিদার তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য।
দলীয় সূত্রের খবর, আগামী ১৮মে বামফ্রন্টের বোর্ড গঠন হলে প্রথমেই প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তাতে সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে ওয়ার্ডগুলিতে বামপ্রার্থীর কাছে পরাজিত বিরোধী প্রার্থীকে যথাযোগ্য মর্যাদা নিয়ে থাকার জন্য বলা হবে। এতে এলাকার উন্নয়নের কাজ অনেক স্বচ্ছ ভাবে হবে বলেই অশোকবাবুরা মনে করছেন। পাশাপাশি, বিরোধীদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের বাসিন্দাদের মতামতও পুরসভা অবধি পৌঁছবে বলেই বাম নেতারা ধরে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে অশোকবাবু বিষয়টি নিয়ে দলের একাধিক নেতা, কাউন্সিলরের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
অশোকবাবু বলেন, ‘‘পুরসভার উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি হয় না। আমি দুই দশকের উপর রাজ্যের পুরমন্ত্রী ছিলাম। তখন বিরোধীদের দখলে থাকা রাজ্যের পুরসভাগুলি ঠিকঠাক সাহায্য পায়নি, এটা বলতে পারবে না। এবার শিলিগুড়িতে আমাদের দখলে থাকা প্রতিটি ওয়ার্ডে বিরোধীদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হবে। সদ্য হারা বিরোধী প্রার্থীকেও ওয়ার্ড কমিটিতে রাখা হবে।’’ তিনি জানান, পুরসভার কাজের ভিত্তিই হচ্ছে ওয়ার্ড কমিটি। তাতে বিরোধীদের নিয়ে সুষ্ঠু মতামতের ভিত্তিতে কাজ করলে এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বামেদের ২৩টি ওয়ার্ডে তো করা হবে। বিরোধীদেরও বলা হবে, তাঁরাও চাইলে তা করতে পারেন।
রাজ্যের পুর আইন অনুসারে ওয়ার্ড কমিটিগুলির মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নের প্রস্তাবের প্রাথমিক খসড়া তৈরি হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছরে শিলিগুড়ি পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডেই ওয়ার্ড কমিটি কাযর্করী ছিল না বলে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে। কাগজে কলমেই কমিটিগুলি টিকে ছিল বলে গত বোর্ডের একাধিক শাসক এবং বিরোধী কাউন্সিলর অভিযোগ করতেন। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিগত দিনে একক বা হাতে গোনা কয়েকজন মিলে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কাগজে কলমে থাকা ওয়ার্ড কমিটির নামেও দেখিয়েছেন। পাড়ার বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামত অনেক সময়ই সঠিকভাবে কাজের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়নি বলে ওই বাসিন্দাদের অভিযোগ।
এই প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘কারা কী করবেন সেটা তাঁদের ব্যাপার। শুধু বলব, আমরা উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি করি না। মানুষের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। সকলকে নিয়ে কাজ করাটাই আমাদের রীতি।’’ মন্ত্রী জানান, হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া একেবারেই কার্যকরী ছিল না ওয়ার্ড কমিটিগুলি। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটিগুলিও একই হাল ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘ এবার দেখা যাক কী দাঁড়ায়।’’
২০০১ সালের ওয়ার্ড কমিটি আইন মেনে পুর ওয়ার্ডের জনসংখ্যা হিসাব করে ওয়ার্ড কমিটি সদস্য সংখ্যা ঠিক হয়। সর্বাধিক ১৪ এবং সর্বনিম্ন ১১ জনের কমিটি তৈরি হয়। কমিটির ৩ জন পুরসভা থেকে মনোনীত হন। এলাকার বিভিন্ন স্তর থেকে বাকিদের কাউন্সিলর বাছাই করেন। সেখানে বিপিএল পরিবারের মহিলাকে রাখারও নিয়ম রয়েছে। অনেক সময় আবার নিজের দলের লোকজন দিয়েই কমিটি গঠন হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর হন। একজন সম্পাদক থাকেন। মাসে একটি বৈঠক ছাড়াও বছরে সাধারণ সভা করার নিয়মও রয়েছে। এর জন্য পুরসভা থেকে কিছু বরাদ্দও দেওয়া হয়। বৈঠকে কাউন্সিলর সবার মতামত নিয়ে রাস্তা, নিকাশি, জঞ্জাল অপসারণ, বিদ্যুৎ, বিভিন্ন ভাতা বা প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকদের তালিকা তৈরি-সহ নানা প্রস্তাব তৈরি করে পুরসভায় জমা দেন। তার ভিত্তিতেই বোর্ড মিটিঙে উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করে কাজ হয়।
গতবারের বোর্ডে প্রথমে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেসের বোর্ড চলছে। পরে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটের বোর্ডও হয়। তার পরে আবার শুধু কংগ্রেস একাই বোর্ড চালিয়েছে। তাতে কোনও সময়ই ঠিকঠাক ওয়ার্ড কমিটিগুলি গড়া হয়নি বলেই অভিযোগ। বহু ওয়ার্ড থেকে তালিকা চেয়ে দেরিতেও মিলেছে। আবার তালিকা মিললেও ঠিক কাজ হয়নি। কেন্দ্রীয়ভাবে পুরসভা থেকে ওয়ার্ডগুলিতে কাজ করা হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে গতবারের মেয়র তথা কংগ্রেস নেত্রী গঙ্গোত্রী দত্ত বলেছেন, ‘‘ওয়ার্ড কমিটি যত কার্যকরী থাকা দরকার, আমাদের সময় তা হয়নি।’’