নথি যাচাইয়ের কাজ চলছে। —ফাইল চিত্র।
১৯৭১ সাল বা তার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসা মানুষদের বিষয়ে অনেক নথিই আর রাজ্য সরকারের হেফাজতে নেই। অসমের নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) তথ্য যাচাই করতে গিয়েই এই ‘নির্মম সত্য’ সামনে এসেছে।
জেলা প্রশাসন আধিকারিকদের অনুমান, ওই সব নথি হয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে, না হয় আইনমাফিকই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ফলে এক দিকে যেমন ওই সব নথির প্রতিলিপি দাখিল করা অসমের বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে, তেমনই প্রশ্ন উঠেছে, এ রাজ্যে যদি কখনও এনআরসি তৈরি হয়, তা হলে ও-পার বাংলা থেকে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎই বা কী হবে!
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, স্বাধীনতার পরে ছিন্নমূল মানুষদের অধিকাংশ উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়া সীমান্ত দিয়েই এ বাংলায় এসেছিলেন। তাঁদের নাম নথিভুক্ত করার জন্য সীমান্তে বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল ভারত সরকার। নাম নথিভুক্তির পর তাঁদের একটি করে শংসাপত্র দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সেই শংসাপত্রই তাঁদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
অসমে এনআরসি নবীকরণ প্রক্রিয়ায় ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ বা তার আগে এ দেশে আসার প্রমাণ হিসেবে বহু মানুষ অন্যান্য নথির সঙ্গে নিজের বা পূর্বপুরুষের সেই শংসাপত্র দাখিল করেন। সেই শংসাপত্রের সঙ্গে সীমান্তে নথিভুক্ত করা তথ্য মিলছে কি না, তা যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে পাঠানো হয়। এ রাজ্যে আসে প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার নথি। কিন্তু তার অধিকাংশই যাচাই করে ফেরত পাঠায়নি পশ্চিমবঙ্গ। তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এর পরেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। জেলায় জেলায় পাঠানো হয় নথি।
সেগুলি যাচাই করতে গিয়েই জেলা প্রশাসন জানতে পারছে, সীমান্ত-কার্যালয়ে এখন আর এই সংক্রান্ত বহু নথিই নেই। ফলে যাচাই না-হওয়া নথি ফেরত পাঠাতে হচ্ছে এনআরসি কর্তৃপক্ষের কাছে। জেলা প্রশাসনের এক অফিসারের কথায়, ‘‘সীমান্ত-তথ্য শেষ পর্যন্ত না পেলে সংশ্লিষ্ট মানুষদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এনআরসি কর্তৃপক্ষের বিবেচনার উপরেই নির্ভর করবে।’’
তাঁরা কেন এমন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, ‘‘যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি যদি না থাকে, তা হলে তার খেসারত নাগরিকরা দেবেন কেন?’’
কেন মিলছে না এমন গুরুত্বপূর্ণ নথি? জেলা প্রশাসনের একটি অংশের ব্যাখ্যা, ‘বেঙ্গল রেকর্ডস ম্যানুয়াল, ১৯৪৩’ অনুযায়ী, তিন ধরনের সরকারি নথির সংরক্ষণ পদ্ধতি তিন রকম। প্রথমত, জমি সংক্রান্ত নথিগুলি চিরকালের জন্য সংরক্ষণ করতে হয়। দ্বিতীয় ধরনের নথি ১২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক। বাকি নথি দু’বছর পরেই নষ্ট করে ফেলা যায়। অভিজ্ঞ আমলাদের একাংশের ধারণা, সীমান্তে নথিভুক্ত করা তথ্য যে হেতু দ্বিতীয় ধরনের নথি, তাই ১২ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে সেগুলি সংরক্ষণে আর বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কালের নিয়মেই তার বেশ কিছুটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
তবে সমস্যা আছে সংরক্ষিত নথি নিয়েও। জেলা প্রশাসনগুলির একাংশ জানাচ্ছে, জমি সংক্রান্ত অনেক নথি এতটাই অস্পষ্ট যে তা পড়াই যাচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্ট পর্ষদগুলির কাছে তথ্য থাকায় শিক্ষা সংক্রান্ত নথি যাচাইয়ে সমস্যা হচ্ছে না।