কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষকদের স্থায়ী চাকরি ও বেতনের ব্যাপারে রবিবার আশা ও আশ্বাস দিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু সরকারি কোষাগারের চূড়ান্ত দুর্দশার মধ্যে সেই আশ্বাস কবে, কী ভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেই বিষয়ে কিছুই বললেন না।
পুরো সময়ের শিক্ষকের মর্যাদা এবং বেতন বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক সময়ের শিক্ষক সংগঠন (কুটাব)। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে তাদের অনুষ্ঠানে মূলত দু’টি আশ্বাস দেন। তিনি জানান: প্রথমত, যে-সব আংশিক সময়ের শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি নির্ধারিত যোগ্যতামান (স্থায়ী কলেজ-শিক্ষক হয়ে ওঠার) রয়েছে, তাঁদের বিষয়ে কলেজ সার্ভিস কমিশন (সিএসসি)-এর সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। দ্বিতীয়ত, যে-সব শিক্ষকের সেই যোগ্যতামান নেই, তাঁদের ব্যাপারে শিক্ষা দফতর থেকে কিছু করা যায় কি না, ভাবনাচিন্তা চলছে সেই ব্যাপারেও। শিক্ষামন্ত্রী জানান, এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তাঁর কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই ‘বিষয়টি’ ঘোষণা করবেন বলে এ দিন আশ্বাস দিয়েছেন পার্থবাবু।
‘বিষয়টি’ অর্থাৎ সরকারের ওই ভাবনাচিন্তা কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে, শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য তার কোনও ইঙ্গিত দেননি। তবে এই ঘোষণার ব্যাপারে সরকারের বাধা যে অর্থের অভাব, সেটা এ দিন বারবার বলেছেন তিনি। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘প্রয়োজন হলে শিক্ষা দফতরের খরচ থেকে কিছু কাটছাঁট করা যায় কি না, সেটাও দেখছি। আপনাদের (দাবিতে সরব শিক্ষকদের) ধৈর্য ধরতে হবে।’’
সরকারের টানাটানির সংসারে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা শুনে হতাশ হয়েছেন কুটাবের একাংশ। অনুষ্ঠানের শেষে সংগঠনের এক সদস্যা কয়েক জন বন্ধুকে বললেন, ‘‘শুনেছিলাম, দাবি পূরণের ঘোষণা হবে। কিন্তু এ তো শুধু আশ্বাস!’’ তা শুনে আর এক জন বললেন, ‘‘ভাঁড়ারে চাল না-থাক, ভাত খাওয়ানোর আশ্বাস তো দিলেন!’’
শিক্ষামন্ত্রী ধৈর্য ধরার পরামর্শ শুনে কুটাবের একাংশের প্রশ্ন, এত দিন ধরে তাঁরা তো ধৈর্য ধরেই আছেন। তা হলে এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে নতুন কী মিলল?
এর কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি কুটাবের সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ। তবে সদস্যদের একাংশের বক্তব্য, কুটাবে তৃণমূলপন্থীরা ঢুকে পড়ার ফলেই সংগঠনের মেজাজে বদল এসেছে। এ দিন অনুষ্ঠানস্থলে তার প্রমাণও মিলেছে। কুটাবের ব্যানার-গেটে মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাসিমুখের ছবি লাগানো ছিল। এমনকী ‘তৃণমূল সমর্থিত কুটাব’— এই নামেও ব্যানার টাঙানো হয়েছিল। পরে অবশ্য ওই ব্যানারটি খুলে নেওয়া হয়। সভাগৃহের মধ্যে কুটাবের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আংশিক সময়ের শিক্ষক সংগঠন (তৃণমূলপন্থী বলেই যাঁরা পরিচিত)-এর ব্যানারও চোখে পড়েছে। তার উপরে উদ্বোধনী সঙ্গীতে ছিল সরকারের প্রশস্তির সুর।
নিজের বক্তৃতায় তৃণমূলেরই প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর তুলনা টেনে আনেন কুটাবের সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আগের শিক্ষামন্ত্রীর (ব্রাত্য বসু) থেকে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী সম্পূর্ণ আলাদা। ইনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।’’
কুটাব শাসক দলের অনুগামী হয়ে পড়েছে, এটা অবশ্য মানতে রাজি নন সাধারণ সম্পাদক। তবে সংগঠনে তৃণমূলপন্থীরা আদৌ নেই, এই দাবিও করেননি তিনি। গৌরাঙ্গবাবু বলেছেন, ‘‘কুটাব একটা মঞ্চ। এতে ডান-বাম সকলেই আছে। আর মুখ্যমন্ত্রীকে আমাদের দাবির কথা জানানোর জন্যই তাঁর ছবি লাগিয়েছি।’’
তা হলে ‘তৃণমূল সমর্থিত কুটাব’ লেখা ব্যানার দেওয়া হয়েছে কেন?
গৌরাঙ্গবাবু বলেন, ‘‘আমাদের না-জানিয়েই কেউ কেউ এটা করেছিল। আমরা তৃণমূল নই। তাই এই কাজকে ধিক্কার জানাই।’’