নিত্যানন্দের মা অঞ্জলি দাস।
সাজা ঘোষণার পরেই গ্রামের মানুষেরা নিত্যানন্দ দাসকে উপেক্ষা করতে শুরু করেছেন। একই কারণে ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন আত্মীয়-পরিজনেরাও।
বহরমপুরের একই পরিবারের তিন মহিলা খুনের মামলায় শুক্রবার নিত্যানন্দের আমৃত্যু যাবজ্জীবনের সাজা হয়েছে। এতে গ্রামের সুনাম নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। নিত্যানন্দ প্রসঙ্গ উঠলেই তাঁরা উগরে দিচ্ছেন একরাশ বিরক্তি।
রেজিনগরের মাঙ্গনপাড়ার বাসিন্দা নিত্যানন্দের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হওয়ায় গ্রামের বদনাম হয়েছে বলে মনে করছেন অধিকাংশ গ্রামবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা সনাতন দাস বলছেন, ‘‘নিত্যানন্দ গ্রামের মুখ পুড়িয়েছে। তার জন্য গ্রামের বদনাম হচ্ছে। তার আচরণে এখন গ্রামের মানুষদের লজ্জায় মাথা হেঁট যাচ্ছে। তার সম্বন্ধে কোনও কথা বলতে চাই না।’’
২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি বহরমপুরের আশাবরী আবাসনের একই পরিবারের তিন মহিলার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ শিলিগুড়ি থেকে নিত্যানন্দ দাসকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছিল। তার পর থেকেই বহরমপুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি অবস্থায় বিচারপর্ব চলে তার। বহরমপুর আদালতের বিচারক ওই মামলায় গত বৃহস্পতিবার নিত্যানন্দকে দোষী সাব্যস্ত করে শুক্রবার আমৃত্যু যাবজ্জীবনের সাজা শোনান।
ওই সাজার কথা শোনার পরেই মাঙ্গনপাড়ার সুব্রত মন্ডল বলছেন, ‘‘কুকর্ম করলে তার সাজা তো তাকে ভোগ করতেই হবে।’’
গ্রামবাসীরা শুধু নন, আত্মীয়-পরিজনেরাও এখন তাকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। নিত্যানন্দের জামাইবাবু শ্যামল বিশ্বাস বলছেন, ‘‘আমি ছেলেবেলায় যে নিত্যানন্দকে চিনতাম, সেই নিত্যানন্দ আর এখনকার নিত্যানন্দ এক নয়। ছেলেবেলার সেই লাজুক ছেলেটা আচমকা বদলে যাওয়ায় কষ্ট হয় ঠিকই, তবে এখন তার পরিচয় দিতে চাই না।’’
এ দিকে ছেলের সাজা শুনে শুরুতে কথা বলতে চাননি ৭৪ বছর বয়সী বাবা নিমাই দাস বৈরাগ্য। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, ‘‘ছেলে যেখানেই থাকুক, ভাল থাকুক।’’
নিত্যানন্দের মা অঞ্জলি দাস অবশ্য বহরমপুরের ভাকুড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে নিত্যানন্দের ছেলেকে নিয়ে থাকেন। কান্না ভেজা গলায় তিনি বলছেন, ‘‘দেখুন কথা বলার মত মানসিক অবস্থা এখন আমার নেই। যা বলার কলকাতার উকিলবাবু বলবেন।’’ নিত্যানন্দের স্ত্রী মানতা দাসের খোঁজ নেই। সে কথা জানিয়ে ওই বৃদ্ধা বলছেন, ‘‘আমি জানি না তিনি কত দিন বাঁচবো। তবে নাতির মুখ চেয়ে বাঁচতে চাই কিছু দিন।’’