নারদ ‘অপারেশন’-এর যাবতীয় খরচ তাঁরই দেওয়া

কেডি সিংহের তরফে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তাঁর অফিস থেকে বলা হয়েছে, ‘কে ডি সিংহ কোনও জবানবন্দি দেননি। ইডি-র কোনও কর্তার সঙ্গে দেখাও করেননি।’

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৫
Share:

কেডি সিংহ

তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য কেডি সিংহ সম্প্রতি ইডি-কে জবানবন্দি দিয়ে জানিয়ে এসেছেন, নারদ কাণ্ডের ‘স্টিং-অপারেশন’-এর যাবতীয় খরচ তাঁরই দেওয়া। সূত্রের খবর— শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে হেলিকপ্টার দেওয়া থেকে শুরু করে গত কয়েক বছরে

Advertisement

দলকে টাকা জোগানোর সবিস্তার তথ্যও ইডি-র অফিসারদের জানিয়েছেন অ্যালকেমিস্ট-এর এই মালিক। কেডি-র বয়ান রেকর্ড করেছে ইডি।

কেডি সিংহের তরফে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তাঁর অফিস থেকে বলা হয়েছে, ‘কে ডি সিংহ কোনও জবানবন্দি দেননি। ইডি-র কোনও কর্তার সঙ্গে দেখাও করেননি।’ যদিও কেডি-র ঘনিষ্ঠ মহল ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, কেউ কোনও স্টিং অপারেশন যদি করেও থাকেন, তথ্য জানার স্বার্থে সেটা বেআইনি কিছু নয়। সুপ্রিম কোর্টেও এর পক্ষে অনেক রায় আছে। পাল্টা যুক্তিও উঠে আসছে— ব্যক্তিপরিসর সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই স্টিং অপারেশনকে বেআইনি বলেই দেখা উচিত।

Advertisement

তবে কেডি প্রকাশ্যে যে অবস্থানই নিন, ইডি সূত্রে বিষয়টি সামনে আসায় চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। কেডি-র জবানবন্দির পর নতুন মোড়ে ইডি-র তদন্তেও। জল্পনা শুরু হয়েছে, হঠাৎ এই কাজ কেন করতে গেলেন কেডি? রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, নারদ কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল গত মার্চে কেডি সিংহের নাম জানানোর পরেই ইডি ঘিরে ফেলতে শুরু করে তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন নথিপত্রও সংগ্রহ করা হয়। স্পষ্ট হয়ে যায় যে ম্যাথুর কলকাতা যাতায়াতের বিমান ভাড়া, হোটেল বুকিং থেকে যে টাকার বান্ডিল তিনি মন্ত্রী-সাংসদদের হাতে দিয়েছিলেন— সবই দেওয়া হয়েছে কেডি-র অ্যালকেমিস্ট-এর অফিস থেকে। ফলে আগ বাড়িয়ে জবানবন্দি দিয়ে রাজসাক্ষী হওয়ার চেষ্টা ছাড়া উপায় ছিল না কেডি-র।

আরও পড়ুন: ‘দাজু, পপু আউন্দাইছ’ শুনে, জুতো ফেলেই ছুট

মুকুল রায়ের তৈরি জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অমিতাভ মজুমদার গত সপ্তাহে ইডি-কর্তাদের সঙ্গে দেখা যান। তাঁর কথায়, ‘‘নারদ কাণ্ড নিয়ে কিছু কাগজপত্র দিতে আমরা ইডি-র যুগ্ম অধিকর্তা এস ডি চান্দের-এর কাছে যাই। অ্যালকেমিস্ট সংস্থার সঙ্গে নারদ-এর যোগাযোগের বিষয়ে কিছু কাগজ ইডিকে দিতে গিয়েছিলাম।’’ অমিতাভ জানিয়েছেন— ইডি-কর্তা বলেন তার আর দরকার নেই। কারণ কেডি নিজেই সম্প্রতি দিল্লিতে তাঁদের অফিসারদের কাছে স্বীকার করেছেন যে স্টিং অপারেশন তাঁর খরচেই হয়েছে।

সূত্রের বক্তব্য, ২০১৪ সালে এই স্টিং অপারেশনটি কেডি-ই ম্যাথুকে দিয়ে করে রেখেছিলেন। কারণ তার পরের বছর তৃণমূলের দু’টি রাজ্যসভার আসন ফাঁকা হচ্ছিল আর কেডি-র মেয়াদ শেষ হচ্ছিল ২০১৬-য়। কেডি চেয়েছিলেন ২০১৬ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ২০১৫ সালেই তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে আবার ছ’বছরের জন্য নিজের মেয়াদ পাকা করে নিতে। তৃণমূলের একাংশের অনুমান, তাঁর এই উদ্যোগে যাতে কোনও বাধা না-আসে, তাই নিজের পকেটে নেতাদের টাকা খাওয়ার এই সিডি-টি রেখে দিতে চেয়েছিলেন কেডি। উদ্দেশ্য ছিল, প্রয়োজনে রাজনৈতিক দর কষাকষি করা। কিন্তু ২০১৫-য় তৃণমূল নির্বিঘ্নেই তাঁকে টিকিট দিয়ে দেয়। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ম্যাথু যে পরে খোদার উপরেই খোদকারি করবেন এবং এ ভাবে তাঁকে ফাঁসাবেন, এমন হিসাব বোধ হয় কেডি-র ছিল না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন