বাংলার স্কুলে শিক্ষক-পড়ুয়ার হাজিরা নিম্নমুখী

পড়ুয়া ভর্তির দিক থেকে বাংলার ছবিটা অবশ্য উজ্জ্বল। বাড়ছে পড়ুয়ার সংখ্যা। রাজ্যের ৯৮ শতাংশ শিশুই এখন স্কুলে যায়। ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার হারও বাড়ছে। যে-সব রাজ্যে মেয়েদের স্কুলের বাইরে থাকার হার কম, তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজিরা নিয়ে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ক্ষোভ-বিক্ষোভ-গোলমাল চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। সেই সময়েই রাজ্যের স্কুলে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা, দু’পক্ষেরই হাজিরা কমছে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে মঙ্গলবার দিল্লিতে প্রকাশিত ‘অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্ট (আসের) ২০১৮’–এ।

Advertisement

রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে-ক’টি রাজ্য পড়ুয়াদের হাজিরার দিকে থেকে নীচের দিকে রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ তাদের অন্যতম। সেই সঙ্গে এ রাজ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়মিত স্কুলে উপস্থিতির হারও কম। ২০১৬ সালে শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার হার ছিল ৮২.৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা কমে হয়েছে ৭৬.৭ শতাংশ। পড়ুয়াদের হাজিরার হার ৬০.১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৫৪.৯ শতাংশ। ‘প্রথম’ নামে একটি সংস্থার উদ্যোগে দেশের গ্রামীণ স্কুলের অবস্থা এবং স্কুলগুলির তিন থেকে ষোলো বছরের পড়ুয়াদের পারদর্শিতার নমুনা সমীক্ষা করে এই বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এ রাজ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে ১১ হাজার ৯৭২ পড়ুয়ার উপরে। কয়েক বছর ধরেই বার্ষিক ‘আসের’ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়ে আসছে। এই সমীক্ষার জন্য যাওয়া হয়েছিল রাজ্যের গ্রামাঞ্চলের ৪৪১টি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে। তার মধ্যে ৪৩৭টি প্রাথমিক স্কুল। উচ্চ প্রাথমিক চারটি।

পড়ুয়া ভর্তির দিক থেকে বাংলার ছবিটা অবশ্য উজ্জ্বল। বাড়ছে পড়ুয়ার সংখ্যা। রাজ্যের ৯৮ শতাংশ শিশুই এখন স্কুলে যায়। ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার হারও বাড়ছে। যে-সব রাজ্যে মেয়েদের স্কুলের বাইরে থাকার হার কম, তাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে গ্রামের স্কুলে। দেখা যাচ্ছে, গ্রামাঞ্চলে বেসরকারি স্কুলে ভর্তির প্রবণতা কমছে। পরিকাঠামোর দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের স্কুলের উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। ২০১০ সালে দেশ জুড়ে শিক্ষার অধিকার আইন বলবৎ হয়। সেই আইনে বেশ কিছু বিষয় স্কুলগুলিতে বাধ্যতামূলক। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্যবহারযোগ্য শৌচাগার আছে, এমন স্কুলের হার ২০১০-এর থেকে ২৯% বেড়ে ২০১৮ সালে হয়েছে ৮১.১%। এই হার জাতীয় হারের তুলনায় বেশি। ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচাগারের সংখ্যাও ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে। ২০১০-এর তুলনায় ৪৪% বেড়ে হয়েছে ৬৭.৭%।

Advertisement

এই সমীক্ষায় দেখা হয়েছে, সব পড়ুয়ার প্রথম শ্রেণির দক্ষতা আছে কি না অর্থাৎ বর্ণ ও শব্দ চেনে কি না এবং ছোট অনুচ্ছেদ পড়তে পারে কি না। দেখা হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির দক্ষতা অর্থাৎ পুরো গল্প পড়তে পারে কি না। দেখা গিয়েছে, তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্য পড়ার দক্ষতা বাড়ছে। পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের ৫০ শতাংশের কিছু বেশি দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্য পড়তে পারে। আগের তুলনায় এই হার সামান্য বেড়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্য পড়তে পারে, অষ্টম শ্রেণির এমন পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে। তবে পড়ার ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৬ বছরের ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা এগিয়ে। এই বয়সিদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্য পড়তে পারে ৬৯.১% ছাত্রী। সেখানে ছাত্রদের শতাংশ ৬০.৩।

অঙ্কে পড়ুয়াদের কুশলতা নিয়েও উল্লেখযোগ্য তথ্য উঠে এসেছে ওই সমীক্ষার রিপোর্টে। বিয়োগ করতে পারে, তৃতীয় শ্রেণির এমন পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে। ভাগ করার কুশলতা কমছে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন