AUTHOR

‘সিগারেট-চা দিয়ে বসিয়ে আমাকে তালাবন্ধ করে চলে গিয়েছিলেন’

নীরেনদা আমার কাছে বড় দাদা। তাঁর চলে যাওয়া আমার কাছে কোনও সাহিত্যিক বিয়োগ নয়, বরং আত্মীয়বিয়োগের যন্ত্রণাই টের পাচ্ছি আজ।

Advertisement

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৫৫
Share:

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ইনসেটে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

আজ বার বার ওই দিনটার কথা মনে পড়ছে। আনন্দবাজার পত্রিকায় তখন চাকরি করতে ঢুকেছি সবে। নীরেনদা সোজা একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর সিগারেটের প্যাকেট ও একটা চায়ের ফ্লাস্ক রাখলেন। চোখ পাকিয়ে বলে গেলেন, ‘‘লেখা না পেলে ছাড়া পাবি না।’’ দেখি সত্যি সত্যি যাওয়ার সময় ঘর তালাবন্ধ করে দিচ্ছেন!

Advertisement

আমি কোনও দিনই সময়ে লেখা দিতে পারিনি। আমারই ব্যর্থতা। কিন্তু সেই কারণে কোনও বকাঝকা নেই, বিরক্তি নেই। সটান তালাবন্ধ করে রেখে লিখিয়ে নিলেন। এমন ঠান্ডা মাথায় ঋজু শাসন করার মতোই সম্পর্ক ছিল নীরেনদার সঙ্গে আমার।

যখন বোর্ডিং-এ থেকে ব়ড় হচ্ছি, তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার হৃদ্যতা। আমার এক রকমের লোকাল গার্জেন ছিলেন তিনি। আমাকে তুইতোকারি করতেন। বিয়ের পর আমার বউকেও ভাসুরঠাকুরসুলভ গাম্ভীর্যে তুই সম্বোধনে ডাকতেন। নীরেনদা আমার কাছে বড় দাদা। তাঁর চলে যাওয়া আমার কাছে কোনও সাহিত্যিক বিয়োগ নয়, বরং আত্মীয়বিয়োগের যন্ত্রণাই টের পাচ্ছি আজ।

Advertisement

আরও পড়ুন: এক এক করে সিনিয়াররা চলে যাচ্ছেন…

অমন জ্ঞানী মানুষের সামনে বসে শব্দ-ছন্দ-বানান-ব্যকরণ যে কত শিখেছি! ভাষার উপর এত দখল, দেখে অবাক হতাম। মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে কোনও যুক্তি না মেনে তর্ক করতে চাইছি বুঝলে আশকারা দিতেন। কখনও বিরক্ত হতে তো দেখিইনি, উল্টে আরও জুতসই যুক্তিতে কুপোকাত করেছেন আমাকে কত কত বার! আমার লেখকজীবনে যে প্রশ্রয়, যে আদর ও স্নেহ তাঁর কাছে পেয়েছি, তেমন করে আর কারও থেকে নয়। লিখিয়ে নিতে পারেন ক’জন? নীরেনদা ছিলেন সেই লিখিয়ে নিতে পারা সম্পাদকগোষ্ঠীর অন্যতম মুখ।

লেখায় ব্যস্ত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। ছবি সৌজন্য: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

‘আনন্দমেলা’-য় ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ লেখার সময় নীরেনদার উৎসাহ, সাহস ও প্রেরণা না পেলে ওই লেখা লিখতে পারতাম কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। নীরেনদা যখনই আমাদের বাড়িতে এসেছেন, তখনই তাঁর নিজস্ব জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে ঘরোয়া আড্ডাগুলোকেও জমিয়ে দিতেন। খাওয়াদাওয়া করতেও করতে কতই না রসিকতায় মুড়ে দিতেন সব। বস্তুত, খুব স্বল্পবাক মানুষ ছিলেন, কিন্তু মুখের অনুপম হাসিটিই যেন বলে দিত অনেক না বলা কথা।

আরও পড়ুন: ‘কাঁধে হাত রেখে ওই নিরুচ্চার হাসির দাম মেটাতে পারবে না কবিতাও’

তাঁর মৃত্যু নিয়ে আলাদা করে কোনও আক্ষেপ হয়তো আজ নেই, অবশ্যই দীর্ঘ জীবন বেঁচেছেন। কিন্তু কী জানেন, আত্মীয়ের থাকা ও না থাকায় বিস্তর ফারাক! সেই যে শূন্যস্থান আজ গ্রাস করেছে আমাকে তা পূরণ হওয়ার নয়। এক বড় শূন্যস্থান নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে হবে। কিছু মনোকষ্ট, শোক বোধ হয় মনের কোটরে এ ভাবেই থেকে যায়।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবরআমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন