সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত স্কুলে নীল–সাদা রং করার জন্য সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেঁকে বসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্কুল। সেখানকার কর্তৃপক্ষ স্কুলশিক্ষা দফতরে জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলবাড়িতে বরাবরই গেরুয়া রং করা হয়। তাঁরা সেই রং-ই করতে চাইছেন। নীল-সাদা রং দিতে বাধ্য করানো হলে তাঁরা আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি সোমবার জানান, জেলার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কাছে স্কুলবাড়ির বাইরের ছবি তুলে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে রং করার জন্য কত টাকা প্রয়োজন, তা জানাতে বলা হয়েছিল। তাঁরা তা পাঠিয়েছেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, বরাবরের মতো স্কুলভবনের রং গেরুয়াই রাখতে চাইছেন তাঁরা। চন্দনবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘নির্দেশে বলা হয়েছে, সারা জেলায় সব স্কুলে এক রং করানো হবে। সেই নির্দেশ দেখেই আমরা আপত্তি জানিয়েছি।’’ এর আগে স্কুলশিক্ষা সচিব দুষ্মন্ত নারিয়ালার পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছিল, সরকারি নিয়মে যে-রঙের কথা বলা আছে, সেটাই করতে হবে। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, এই আমলে নীল-সাদাই সরকারি রং।
চন্দনবাবু এ দিন জানান, যদি গেরুয়ার বদলে তাঁদের অন্য রং করতে বলা হয়, তা হলে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। বহু বছর আগে এই স্কুল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন লোকশিক্ষা পরিষদের অধীনে ছিল। তখন থেকে স্কুলবাড়িতে গেরুয়া রং-ই দিয়ে আসা হচ্ছে। জানুয়ারিতে স্কুলশিক্ষা সচিবের নির্দেশে জানানো হয়েছিল, রাজ্য জুড়ে সব স্কুলবাড়ি রং করাতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুলগুলিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রং করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শেষ করতে হবে ৫ মার্চের মধ্যে। চন্দনবাবু জানান, আট দিনের মধ্যে তাঁদের তেতলা স্কুলবাড়ি রং করা প্রায় অসম্ভব। চন্দনবাবু ছাড়াও বেশ কয়েক জন প্রধান শিক্ষক এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: রেললাইনে শ্যুটিং, প্রাণ হারালেন দুই তরুণ
গার্ডেনরিচ নুটবিহারী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য জানান, আট দিনের মধ্যে স্কুলবাড়ি রং করা সম্ভব হবে না। তাঁরা স্কুলশিক্ষা দফতরে আরও সময় চাইবেন। তিনি বলেন, ‘‘আশা করি, সেই সময় আমরা পাব।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আট দিনে স্কুলবাড়ি রং করানোর মধ্যে চমক থাকতে পারে। কিন্তু সেটা অবাস্তব।’’
সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, আগে স্কুল-কর্তৃপক্ষ নিজেদের টাকা খরচ করে রং করবেন। তার পরে সেই টাকা সরকারের ঘর থেকে পাবেন। চন্দনবাবু জানান, তাঁদের স্কুলবাড়ি রং করতে প্রায় ছ’লক্ষ টাকা খরচ হবে। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে আগে টাকা না-পেলে খুবই অসুবিধা হবে।