মঞ্চে পিসি-ভাইপো। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
২১ জুলাইয়ের অগ্নিপরীক্ষার পর এ বার প্রকৃত অভিষেক হল তাঁর।
মুকুল-মদনহীন ২১ জুলাইকে সফল করবার জন্য গত বেশ কিছু দিন ধরে যে ভাবে প্রাণপাত করছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘সফল সভা’য় দাঁড়িয়েই হাতেনাতে তার পুরস্কারও পেয়ে গেলেন পিসি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
ভাইপোকে বক্তৃতার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েক বছরের রীতিই ভেঙে দিলেন মমতা। ফলে আরও বেশ কিছু নেতা বহু বছর পরে একুশের মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেলেন। আর সে কারণে পিছনের সারিতে চলে গেলেন গত বছর পর্যন্তও দাপিয়ে বেড়ানো শিল্পীরা। যে পরিবর্তনে যারপরনাই চমকিত রাজনীতির কারবারিরা।
রীতি অনেক কিছুতেই ভেঙেছে। কখনও তা সচেতন ভাবে, কখনও বা...
কোন কোন রীতি ভাঙল এ দিন?
• অন্য বার একুশের সভার মূল কারিগর হিসেবে থাকেন মুকুল রায়। মঞ্চেও তাঁকে দেখা যায় স্বমহিমায়। কিন্তু, তৃণমূলের প্রাক্তন এই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে এ দিন ম়ঞ্চ থেকে ২ হাজার কিলোমিটার দূরের দিল্লিতে দেখা গিয়েছে।
• থাকতে পারলেন না মদন মিত্র। সংগঠনের কর্মীদের আনা থেকে শুরু করে সকল কাজেই অন্য বার তাঁকে ভীষণ সক্রিয় হিসেবে দেখা যায়। কিন্তু, সারদা-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে আপাতত তিনি জেলেই রয়েছেন। তবে, সমাবেশে আসা কর্মী-সমর্থকদের অনেকের কাছেই নেত্রীর সঙ্গে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীর হাসি মুখের ছবিওয়ালা ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গিয়েছে।
• গত দু’বছরের মতো এ বারের সভায় কোনও তৃণমূল নেতার মুখেই সারদা প্রসঙ্গ শোনা যায়নি।
• এমনকী, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেও তোপ দাগতে দেখা যায়নি কোনও নেতাকেও। খোদ মুখ্যমন্ত্রীও বিষয় দু’টিকে এড়িয়ে গিয়েছেন।
• অন্যান্য বছরের সভায় টলিউ়ডের শিল্পীদের মঞ্চের সামনের সারিতে দেখা যায়। এ বার তাঁদের কয়েক জনকে দেখা গেলেও সামনের সারিতে দেখা যায়নি।
• কলাকুশলীরা অন্যান্য বার মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। এ বার হাতে গোনা কয়েক জনকেই দেখা গেল অনুষ্ঠান করতে।
• ২১ জুলাইয়ের সভা মানেই এক প্রস্থ বৃষ্টি। এমনটা যেন রীতিতে পরিণত হয়েছিল। এ বছর সেই রীতি ভেঙে সভা চলাকালীন এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। তবে সভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা বৃষ্টি পেয়েছেন।
এ রকম রীতিভাঙা সভার মাঝেই অভিষেকের ‘অভিষেক’ ঘটিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের ঘণ্টা বাজালেন মমতা, আর সেটাকেই স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সারির নেতারা। শুভেন্দু অধিকারী কি অন্য রকম কিছু ভাবলেন?