জিএসটি চালুর পরে দেশ জুড়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে একাধিক সচেতনতা প্রকল্প ধাক্কা খেতে চলেছে। সমস্যায় পড়েছেন রাজ্যের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা।
জিএসটি চালু হওয়ার আগে খোদ কেন্দ্রীয় নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গাঁধী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর জিএসটি চালু না করার জন্য আবেদন করেছিলেন। কংগ্রেস সাংসদ সুমিতা দেবও অনলাইন পিটিশনে সই সংগ্রহ করে জমা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি।
পিটিশনে বলা হয়েছিল, দেশের ৩৫৫ লক্ষ রজঃস্বলা মেয়ের মাত্র ১২ শতাংশ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। গ্রামাঞ্চলে এই সংখ্যাটা মাত্র ২ শতাংশ। কারণ প্রতি মাসে এ বাবদ টাকা খরচ করার মতো আর্থিক অবস্থা তাঁদের নেই। এর উপরে ন্যাপকিনে জিএসটি বসলে মেয়েদের স্বাস্থ্যসচেতনতা প্রকল্পগুলি বড় রকম ধাক্কা খাবে বলে জানানো হয়েছিল।
আশঙ্কাটা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করছেন অনেকেই। সম্প্রতি এক বেসরকারি সংস্থার তরফ থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়াদের ১০ টাকায় তিনটে করে ন্যাপকিন দেওয়া চালু করা হয়েছিল। কিন্তু জিএসটি চালু হওয়ায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ এবং ভেন্ডিং মেশিনের উপর ৪৮ শতাংশ দাম বেড়েছে। এতে ন্যাপকিনের দাম এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়ছে। ফলে গত ৩০ তারিখের পর থেকে নতুন করে যেমন ভেন্ডিং মেশিন বসানো বন্ধ, তেমনি চালু মেশিনে ন্যাপকিনের প্যাকেট ‘লোড’ করাও বন্ধ। প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে তাই সংশয়ে ওই সংস্থার মুখপাত্র সোমনাথ ভট্টাচার্য।
একই ভাবে কলকাতার এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক কম টাকায় যৌনকর্মীদের এবং ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের ন্যাপকিনের প্যাকেট বিক্রি করে। এই মুহূর্তে সোনাগাছি এলাকা-সহ রাজ্যের ২৮টি বিভিন্ন যৌনপল্লির প্রায় ৩৮ হাজারের উপর মেয়েকে কম দামে ন্যাপকিন সরবরাহ করে এই সংস্থা। সেই ঊষা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের শান্তনু চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এত দিন ৩ টাকা ৩৩ পয়সায় একটা ন্যাপকিন কিনে তা ২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল। কিন্তু জিএসটি চালু হওয়ায় ৭-৮ টাকায় একটি করে ন্যাপকিন কিনতে হচ্ছে। ফলে ১০ টাকায় যে প্যাকেট কিনতেন মেয়েরা, তার দাম এক ধাক্কায় বেড়ে যাচ্ছে।
সমস্যার কথা জানেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে লড়াই করেছি। হিসেব মতো বর্তমানে যে কর আছে, তার থেকেও বেশি হারে কর বসার কথা ছিল।’’ আবার কেন্দ্রের যুক্তি, আগে ন্যাপকিনের উপরে যা কর ছিল, জিএসটি চালুর পরে তা কমারই কথা। সরকারের দাবি, পরিস্থিতি একটু থিতু হলে হয়তো সমস্যা কমতে পারে।