Autism Spectrum Disorder

বিরল রোগের ওষুধ সচেতনতা, বলছেন ডাক্তাররা

২৮ ফেব্রুয়ারি, ‘বিরল রোগ দিবস’ উপলক্ষে এই সংক্রান্ত একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিল ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইমিউনোলজি অ্যান্ড রিউম্যাটোলজি’।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ০৬:৫৯
Share:

প্রয়োজন সচেতনতা। —প্রতীকী চিত্র।

মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখছিল আলেখ্য। তার মতো আরও অনেকে উপস্থিত সেমিনার হলে। শুধু বয়সে-ভারে তাঁরা ওর থেকে অনেকটাই বড়। এই আট থেকে আশির সকলেই বিরল রোগ, অটোইমিউন স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ‘বিরল রোগ দিবস’ উপলক্ষে এই সংক্রান্ত একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিল ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইমিউনোলজি অ্যান্ড রিউম্যাটোলজি’।

অটোইমিউন ডিসঅর্ডার হল এমন একটি শারীরিক-অবস্থা, যাতে মানবদেহে উপস্থিত নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত শরীরের সুস্থ কোষগুলির ক্ষতি করে। বিষয়টা এমন: ইমিউন সিস্টেমের কাজ, বাইরে থেকে কোনও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে তা নিঃশেষ করা। কিন্তু অটোইমিউন ডিসঅর্ডারে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে নিজের দেহেরই অংশকে (হাড় থেকে চামড়া, যা কিছু হতে পারে) ‘বিপদ’ বলে চিহ্নিত করে ও হামলা চালায়। এই পরিস্থিতিতে ইমিউন সিস্টেম কিছু অ্যান্টিবডি (প্রোটিন) তৈরি করে, যা দেহের সুস্থ কোষগুলিকে আক্রমণ করে।

সাত বছরের আলেখ্য ‘জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস’-এ আক্রান্ত। শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা চিত্রলেখা জানালেন, ২০২০ সালে ছেলের যখন মাত্র দু’বছর, আচমকাই এক দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন, তাঁর শিশু-সন্তানের পায়ের গোড়ালি আর হাতের কব্জি ফুলে গিয়েছে। রক্তপরীক্ষায় ধরা পড়ে, আরএইচ ফ্যাক্টর পজ়িটিভ। যথাযথ চিকিৎসায় এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আলেখ্যর অসুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত রিউম্যাটোলজিস্ট অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রোগ যত দ্রুত ধরা পড়বে, তত বেশি তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’’ ইন্দ্রাণীর আবার রোগ ধরা পড়তেই অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। শিশু অবস্থায় তার গায়ের বিভিন্ন জায়গায় অস্বাভাবিক রকমের ফুলে যাওয়াকে স্রেফ অ্যালার্জি বলে ধরে নিয়েছিলেন ডাক্তারেরা। ইন্দ্রাণীর বাবা জানান, বেশ কয়েক বছর পরে ধরা পড়ে মেয়ের শরীরে একটি প্রোটিন অস্বাভাবিক ভাবে তৈরি হয়।

এ বিষয়ে পেডিয়াট্রিক রিউম্যাটোলজিস্ট সঞ্জীব মণ্ডলের বক্তব্য, অসুখ যখন বিরল, তখন তা রোগীর জন্য বিরল, আবার ডাক্তারের জন্যেও বিরল। ফলে অনেক সময় রোগনির্ণয় কঠিন হয়ে যায়। এই ধরনের অটোইমিউন ডিজ়িজ় সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। অর্ঘ্য এবং সঞ্জীব বারবার করে বলেন, যে কোনও সমস্যা যখন ফিরে ফিরে আসে, কিন্তু কোনও কারণ ব্যাখ্যা করা যায় না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হল অটোইমিউন ডিজ়িজ়। সন্দেহ হলে ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল ব্যারাকপুরের বাসিন্দা অয়ন। খুদে লড়ে চলেছে ‘সিস্টেমিক লুপাস এরিথেম্যাটোসাস’ (এসএলই)-এর বিরুদ্ধে। গুসকরার বাসিন্দা শ্রেয়সী আবার একই অসুখকে প্রায় ‘জয়’ করে ফেলেছেন। এ দিনের অনুষ্ঠানে বললেন, শরীরে জল জমতে দেখে কখনও মনে করা হয়েছিল লিভার সিরোসিস, কখন বলা হয়েছিল টিউবারকুলোসিস। চলেছিল বায়োপসি। শেষে বহু পরীক্ষার পরে ধরা পড়ে অটোইমিউন ডিসঅর্ডার। কিডনি থেকে প্রোটিন বেরিয়ে যাচ্ছে। রোগের নাম এসএলই। মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছেন শ্রেয়সী। নিরঞ্জন ফিরে এসেছেন আত্মহত্যার পথ থেকে। সঠিক চিকিৎসায় অ্যাঙ্কাইলোসিং স্পনডেলাইটিসের সঙ্গে তিরিশ বছর ধরে চলা যুদ্ধে জয়ী তিনিও। জানালেন, কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। হতাশায় ডুবে গিয়েছিলেন।

রিউম্যাটোলজিস্ট সৌরভ প্রধান বলেন, ‘‘সচেতনতা যত বাড়বে, দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে।’’ এ দিনের সমাবেশে ছিলেন চিকিৎসক পার্থজিৎ দাস, চিকিৎসক প্রদ্যুৎ সিনহা মহাপাত্র এবং চিকিৎসক অনিন্দ্য কিশোর মজুমদার। সকলেরই বক্তব্য, কলকাতা শহরে তা-ও কিছুটা সচেতনতা রয়েছে। কিন্তু গ্রামেগঞ্জে অনেক সময়েই দেখা যায়, মানুষ প্রায় বিনা চিকিৎসায় রয়েছেন।

(কিছু রোগীর নাম পরিবর্তিত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন