তৃণমূলের পতাকায় ঢাকা আজাদ, এল বিশাল কনভয়

ধুলো উড়িয়ে সার বেঁধে একটার পরে একটা গাড়ি ঢুকছে গ্রামে। ‘সিংহম’ সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন গ্রামবাসী। বুধবার সকালে যেন তেমনই দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশপাশের বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৭
Share:

নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আজাদের দেহ। ছবি: উদিত সিংহ।

ধুলো উড়িয়ে সার বেঁধে একটার পরে একটা গাড়ি ঢুকছে গ্রামে। ‘সিংহম’ সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন গ্রামবাসী। বুধবার সকালে যেন তেমনই দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশপাশের বাসিন্দারা। নানা দুষ্কর্মে অভিযুক্ত আজাদ মুন্সির দেহ নিতে বীরভূমের নানুর থেকে গোটা তিরিশ গাড়িতে লোকজন এসেছিল হাসপাতালে। তৃণমূলের পতাকা লাগানো শববাহী গাড়িতে, দলের পতাকায় জড়ানো দেহ নিয়ে বিকেলে বীরভূমের উদ্দেশে রওনা হল গাড়ির ‘কনভয়’। সন্ধ্যায় শেষকৃত্য হল নানুরের পাপুড়িতে।

Advertisement

শাসক দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল যেখান থেকে দল চালান, বোলপুরে তৃণমূলের সেই অফিস থেকে গত ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আজাদ নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ। প্রথমে নিখোঁজ-ডায়েরি, পরে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে আশঙ্কায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে তাঁর পরিবার। অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েক জন অনুব্রত-অনুগামী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। পক্ষান্তরে, মঙ্গলকোটের আড়াল গ্রামের বাসিন্দা আজাদ তৃণমূলে অনুব্রত-বিরোধী শিবিরের অন্যতম নেতা কাজল শেখের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। দীর্ঘদিন গ্রামে ফিরতে না পেরে আজাদ সম্প্রতি অনুব্রতর অফিসে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

নানুরের পাপুড়ি গ্রামে আনা হয়েছে আজাদ মুন্সির দেহ। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

মঙ্গলবার মঙ্গলকোটে অজয় নদের চরে মেলে আজাদের দেহ। নানুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক আনন্দ দাস হত্যা-সহ অন্তত ৩৫টি মামলায় অভিযুক্ত এমন এক যুবকের দেহ গ্রামে ফেরাতে হাসপাতালে গেলেন কারা? নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখের দাবি, “আজাদ তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। সে জন্য এলাকার মানুষ স্বতস্ফূর্ত ভাবে বর্ধমান মেডিক্যালে ছুটে গিয়েছেন।” আজাদের ভাই, মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য অঞ্জন মুন্সিরও বক্তব্য, “দাদা তৃণমূল করতেন। এলাকায় তাঁর প্রভাব ছিল বলেই এত মানুষ এসেছেন।”

নানুর-মঙ্গলকোট-কেতুগ্রাম এলাকায় রাজনীতির চলাচল সম্পর্কে ওয়াকিবহালেরা অবশ্য ‘কনভয়’-এর অন্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রথমে চিনতে পারলেও, পরে “আজাদ মুন্সির মতো ক্রিমিনালকে কোনও দিন দেখিনি। সে আমাদের পার্টি অফিসেও কখনও আসেনি”-র মতো মন্তব্যে ‘দূরত্ব’ বাড়ানোর চেষ্টা করেন অনুব্রত মণ্ডল। তারই প্রেক্ষিতে এ দিন শাসক দলের পতাকা লাগানো শববাহী গাড়িতে আজাদের দেহ তুলতে উৎসাহী হয়ে পড়ে অনুব্রতর বিপক্ষ শিবির।

কাটোয়া হাসপাতালে সুরতহালের পরে আজাদের দেহ যখন বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে গিয়ে ময়না-তদন্ত চলছে, তখন হাসপাতালের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে গোটা তিরিশেক গাড়ি। গোটা কুড়ি গাড়ি রয়েছে বর্ধমান-সিউড়ি রাস্তায় তালিতের কাছে। গাড়িগুলিতে যাঁরা ছিলেন, পরিচয় দেন পাপুড়ি-সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে। হাসপাতালে যান বর্ধমান শহরের দুই তৃণমূল নেতা মেহবুব রহমান ও বশির আহমেদ। তাঁদেরও বক্তব্য, “আজাদ দলের লোক। তাই এসেছি।”

ময়না-তদন্ত চলাকালীন মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে আজাদের ভাই অঞ্জন বলেন, “দাদাকে অনুব্রত চিনতেন কি না, মানুষ তা ভালই জানেন।” এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে বুধবার রাতেও অনুব্রত বলেন, “বোলপুর পার্টি অফিসে থাকত না আজাদ। ও কাজল-ঘনিষ্ঠ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন