অ্যাম্বুল্যান্সের অবহেলায় প্রাণ গেল শিশুর

সরকারি নিয়ম বলছে, অসুস্থ কোনও শিশুকে অ্যাম্বুল্যান্সে এক হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে নিখরচায়। সেই নিয়ম মানা তো দূরস্থান, উল্টে এই নিয়ে টালবাহানার জেরে মারাই গেল আট মাসের এক কন্যা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বারাসত শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৩৭
Share:

মৃত রেহানা সুলতানার মা। বুধবার। ছবি— সুদীপ ঘোষ

সরকারি নিয়ম বলছে, অসুস্থ কোনও শিশুকে অ্যাম্বুল্যান্সে এক হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে নিখরচায়। সেই নিয়ম মানা তো দূরস্থান, উল্টে এই নিয়ে টালবাহানার জেরে মারাই গেল আট মাসের এক কন্যা। বুধবার সকালে এই ঘটনা ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় বারাসত হাসপাতালে। শিশুটির পরিজনেরা সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। শেষমেশ সুপার ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি বাতিল করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, মৃত শিশুটির নাম রেহানা সুলতানা। বাড়ি আমডাঙা থানার উত্তর দরিয়াপুর গ্রামে। রেহানার বাবা ইমদাদুল হোসেন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত থেকেই অসুস্থ ছিল মেয়ে। এ দিন সকালে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শিশুটিকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। সেই মতো তাঁরা একটি অ্যাম্বুল্যান্সের কথা লিখে দেন। কিন্তু ইমদাদুলের অভিযোগ, প্রথমে ওই অ্যাম্বুল্যান্স যেতে রাজি হয়নি। বহু অনুরোধ-উপরোধে রাজি হন চালক। কিন্তু তিনি তেল ভরা ও বখশিস বাবদ শিশুটির পরিজনদের কাছে ৭০০ টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে বচসা বাধে দু’পক্ষে। ইমদাদুল বলেন, ‘‘আমি অ্যাম্বুল্যান্স চালকের হাতে-পায়ে ধরে বলি, মেয়ের অবস্থা ভাল নয়। আপনি নিয়ে চলুন। আমাদের কাছে এখন অত টাকা নেই। পরে দেখছি।’’

ইমদাদুলের আরও অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে তখন আরও কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্স ছিল। তাদের অনুরোধ করলে তারা বলে দেয়, লাইনে যে অ্যাম্বুল্যান্স আছে, সেটাই যাবে। কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও ওই চালক যেতে চাননি। ততক্ষণে অন্য অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরা এসে অভিযুক্ত চালকের পক্ষ নেন। বচসা চলাকালীন শিশুটির বাড়ির লোকদের ধাক্কা মারা হয় বলেও অভিযোগ। শেষে হাসপাতাল-কর্মীরা এবং অন্য রোগীর আত্মীয়েরা এসে পরিস্থিতি সামলান। এর মধ্যে কেটে গিয়েছে দেড় ঘণ্টা। ততক্ষণে ছোট্ট রেহানার শরীরটা অনেকটা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। তাকে আর বাঁচানো যায়নি। রেহানার দাদু আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘‘একটু শরীর খারাপ হওয়ায় নাতনিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ও তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে উঠবে। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স চালক এমন ব্যবহার করলেন যে, আমার আদরের নাতনিটাকে আর ফিরে পেলাম না।’’

Advertisement

অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, কখনওই টাকা চাওয়া হয়নি। শিশুটির বাড়ির লোকজনই তাঁদের উপরে চাপ দিচ্ছিলেন। ঘটনার পরে শিশুটির পরিজন এবং হাসপাতাল-কর্মীরা অ্যাম্বুল্যান্স চালকের গাফিলতির অভিযোগ তুলে সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সরকারি প্যানেলভুক্ত ‘নিশ্চয় যান’ নামে ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলিতে নিখরচায় মা-শিশুকে নিয়ে যাওয়ার কথা। অন্যদের ক্ষেত্রে এগুলির ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে আট টাকা। সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘নিশ্চয়-যানে একটি অসুস্থ শিশুকে নিখরচায় নিয়ে যাওয়ার কথা। কেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক শিশুটির পরিবারের সঙ্গে এমন অমানবিক ব্যবহার করলেন, খোঁজ নিয়ে দেখব। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে বাতিল করা হয়েছে। তদন্ত-কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তারা দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে।’’ হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন