সরব: দুই নাগরিকের গ্রেফতারির প্রতিবাদে মৌন মিছিল। শুক্রবার। ফাইল চিত্র
ফেসবুক কাণ্ডে ব্যবসায়ী দেবজিৎ রায় ও ব্যাঙ্ককর্মী অনুপম তরফদার গ্রেফতারের গটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বালুরঘাট শহরে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে কুরুচিকর মন্তব্য প্রয়োগ করাকে সমর্থন করছেন না শহরের কবি সাহিত্যক ও নাট্যকর্মীদের অনেকে। আবার গ্রেফতারের মতো পর্যায়ে বিষয়টিকে নিয়ে গিয়ে পুলিশের অতি গুরুত্ব আরোপের ঘটনাকেও সমর্থন করেননি তারা। অনেকের অভিমত, এ ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের ‘ইগো’ কাজ করছে। দক্ষিণ দিনাজপুরে বালুরঘাটে ফেসবুক কাণ্ডে দু’জনের গ্রেফতার নিয়ে তাই দ্বিধাবিভক্ত বালুরঘাটের সংস্কৃতি জগত। ঘটনার প্রায় এক মাস বাদে বিষয়টি নিয়ে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টাকেও কটাক্ষ করেছেন তাঁদের অনেকে।
বালুরঘাটের নাট্যকর্মী কমল দাস বলেন, ‘‘প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মেনে চলতে সকলে বাধ্য। আপত্তি থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর অনেক পথ রয়েছে। জনমত গঠন করে গণস্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার পদ্ধতি রয়েছে। জনস্বার্থে মামলাও করা যায়। ফেসবুকেও ব্যক্তিগত মতামত জানাতেও কোনও বাধা নেই। তবে সেই প্রতিবাদের ভাষা সংযত হওয়া উচিত।’’ কমলবাবুর মতো কবি বিশ্বনাথ লাহা, মৃণাল চক্রবর্তীর পাশাপাশি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্কৃতি জগতের অনেকেই গ্রেফতারের মতো পুলিশি বাড়াবাড়ি নিয়েও সরব হচ্ছেন।
দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে বালুরঘাটে বিকেল ৪টা থেকে পরদিন ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘন্টা বাইক এবং ছোটগাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ প্রশাসন। পর্যাপ্ত টোটো যাতে চলাচল করতে পারে তার জন্য শহর ও লাগোয়া বিভিন্ন জায়গায় টোটোর উপর থেকে বিধি নিষেধের পুরনো শর্ত পুলিশ তুলে নিয়েছিল। যানজট রোধের পাশাপাশি দুষণমুক্ত পরিবেশে টোটোয় চেপে প্রতিমা দর্শনের জন্য এই ব্যবস্থা বলে জানিয়ে ছিল পুলিশ। কিন্তু পুজোর সময় অনেকেই টোটো না পেয়ে চরম হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ তুলে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানান। তাদের মধ্যে শহরের এক শিক্ষক কৌশিকরঞ্জন খাঁ তাঁর সমালোচনামূলক পোস্টটির এক জায়গায় লেখেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও টোটোর দেখা মেলেনি। কখনও মিললেও টোটো চালকদের অনেকের মুখে মদের গন্ধ। ভাড়াও লাগামছাড়া। পুলিশের ওই ফরমানের জেরে প্রতিমা দেখার সমস্যায় পড়ে এ বার বালুরঘাটের পুজোয় মানুষের ভিড় ছিল না। রাস্তায় ছিল কেবল কুকুর এবং পুলিশ।’’ এরই বিরুদ্ধে কয়েকজন টোটো চালক থানায় অভিযোগ করেন।
কৌশিকবাবুর ওই ফেসবুক পোস্টটিকে শেয়ার করে একাধিক ব্যক্তি পুলিশি জেরার মুখে পড়েন। সতর্ক হয়ে অনেকে ফেসবুক থেকে ওই পোস্ট এবং নিজস্ব মন্তব্য মুছে ফেলেন। কিন্তু কারা কারা ফেসবুকে ওই পোস্ট শেয়ার করেছে এবং মন্তব্য ফেসবুকে রেখে দিয়েছেন পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে থানায় দেখা করতে বলে নোটিস পাঠাতে থাকে। ব্যবসায়ী দেবজিৎ রায় এবং ব্যাঙ্ককর্মী অনুপম তরফদার পুলিশের ওই নোটিশে সাড়া দেননি বলে অভিযোগে তাদের তদন্তে অসহযোগিতা ও তথ্য গোপনের অভিয়োগ তুলে গ্রেফতার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক সাহিত্যিকের মন্তব্য, ‘‘ওই পুলিশ আধিকারিক কতিপয় সাধারণ ব্যক্তির ফেসবুক মন্তব্যকে কেন এত গুরুত্ব দিয়ে কড়া হাতে দমনের চেষ্টা করছেন? শুরুতেই বেড়াল মেরে না রাখলে আগামীতে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও বড় কাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে বিপ্লব হতে পারে, সেই কারণে কি?’’
এই চর্চাও এখন ফিরছে বালুরঘাটের মানুষের মুখে মুখে।