লোক গিয়েছে ভোটে, তালা ঝুলছে ব্যাঙ্কে

ভোট-বাজারে ব্যাঙ্কগুলির আঙুলে কালি লাগানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শুক্রবার কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে তার থেকেও বড় হয়ে দেখা দিল অন্য সমস্যা।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৪
Share:

বন্ধ ব্যাঙ্ক। শুক্রবার কোচবিহারে হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

ভোট-বাজারে ব্যাঙ্কগুলির আঙুলে কালি লাগানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শুক্রবার কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে তার থেকেও বড় হয়ে দেখা দিল অন্য সমস্যা। কেন্দ্রের দুই শহরে দু’টি ব্যাঙ্কের শাখায় এসে গ্রাহকরা দেখলেন, সেখানে তালা ঝোলানো। কেন? ব্যাঙ্কের দরজায় সাঁটা বিজ্ঞপ্তি বলছে, উপনির্বাচনের জন্য শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে ব্যাঙ্ক।

Advertisement

হঠাৎ এমন নোটিস কেন? ব্যাঙ্ক সূত্রে বলা হয়েছে, ভোটের কাজে ব্যাঙ্ক কর্মীরা গিয়েছেন। তা হলে শাখা খোলা থাকবে কী করে? রবিবারেও ব্যাঙ্ক বন্ধ। ফলে টাকার অনটনের বাজারে তিন দিন কাজ হবে না এই দুই শাখায়। বিজ্ঞপ্তি পড়ার পরে মাথায় হাত গ্রাহকদের। শুধু অবশ্য এই শাখাতেই নয়, কর্মীর অভাবে কাজ ব্যাহত হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কে। ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় মোট ২৩টি ব্যাঙ্কের ২০৪টি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির একই শাখার একাধিক কর্মীকে শুক্রবার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ফলে ৫০টির বেশি শাখায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ ছিল তুফানগঞ্জ বাজার এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা ও কোচবিহার নিউটাউনের একটি ব্যাঙ্কের শাখা।

তুফানগঞ্জ মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, “আমি নিজে ওই ব্যাঙ্কের গ্রাহক। এ দিন টাকা তুলতে গিয়ে দু’দিন ব্যাঙ্ক বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দেখে ফিরে আসি। রবিবারও ছুটি। কী করব সেটাই ভাবছি।” তুফানগঞ্জ মহকুমা যুব কংগ্রেস সভাপতি শুভময় সরকার বলেন, “এই সময়ে ওই শাখা পুরোপুরি বন্ধ না রাখলেই ভাল হতো।” তুফানগঞ্জ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়ালও এ দিন ব্যাঙ্কে গিয়ে বন্ধ দেখে ফিরেছেন। ওই শাখার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মোট ন’জন কর্মীর মধ্যে সাত জনেরই ভোটের ডিউটি পড়েছে। বাধ্য হয়ে পরিষেবা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে দৈনিক এক হাজারের বেশি মানুষ পরিষেবা পাচ্ছিলেন এই শাখায়।

Advertisement

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ভোটের কাজের জন্য প্রশাসন জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অন্তত পাঁচশো কর্মীকে তুলে নেওয়ায় ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, ৮ নভেম্বর রাতে পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়। তার আগেই কিন্তু ভোটের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তা-ও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ভোটের কাজের দায়িত্বে থাকা ৯০০ জন ব্যাঙ্ককর্মীর মধ্যে ৪০০ জনকে ‘ছাড়’ দিয়ে অন্য দফতরের বিকল্প কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতরে কথা বলেই বহু ব্যাঙ্ক কর্মীকে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।” কোচবিহারের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সঞ্জয় কুমার বলেন, “প্রশাসন বহু কর্মীকে ছাড় দিলেও যে সব শাখায় কর্মী সংখ্যা কম সেখানে কিছু সমস্যা হয়।’’ শনিবার উপনির্বাচন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রেও। ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশকে ভোটের কাজে পাঠানোয় এখানেও কয়েকটি ব্যাঙ্কে সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্ত শাখায় অন্য শাখা থেকে কর্মীদের নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে বলে আধিকারিকেরা জানান। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল দাবি করেন, ‘‘ভোটের কাজে যে ব্যাঙ্ক কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের অনেককেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু ব্যাঙ্ক কর্মী দায়িত্বে রয়েছেন।’’

ব্যাঙ্কের তরফে কর্মীদের ভোটের দায়িত্ব থেকে ছাড় দেওয়ার আবেদন আসায় মাইক্রো অবজার্ভারের দায়িত্বে থাকা কয়েক জনকে ছাড় দিয়েছে কালনা মহকুমা প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন