—ফাইল চিত্র।
এক নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে অন্যত্র পাচার করে দেওয়া এবং সেই নাবালিকাকে দিনের পর দিন আটকে রেখে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনায় মূল চক্রের তিন পাণ্ডার সাজা ঘোষণা করল বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালত। ঘটনায় বুধবার দোষী জয়দেব মণ্ডল ও আসগর আলি দালালের ২০ বছর কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালত। নাবালিকা পাচারের ঘটনায় অন্যতম মাথা পারুল মল্ল মেটে নামের এক মহিলাকে সাত বছর কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল বাঁকুড়ার জয়পুর থানা এলাকার সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ভাল স্কুলে পড়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা পারুল মল্ল মেটে প্রথমে তাকে নিয়ে যান জয়পুরেরই বাসিন্দা আসগর আলি মণ্ডল নামে এক যুবকের কাছে। আসগর ওই ছাত্রীকে এক রাত আটকে রেখে যৌন নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ। পরে নাবালিকাকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানার বাংলাদেশ সীমান্তের পারুলিয়া এলাকায় নিয়ে গিয়ে জয়দেব নামের এক যুবকের কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ। জয়দেব ওই নাবালিকাকে জোর করে বিয়ে করে দিনের পর দিন নিজের বাড়িতে আটকে রেখে যৌন নিপীড়ন চালান বলেও অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে নিখোঁজ হওয়ার ৪২ দিন পর কোনও ক্রমে সুযোগ পেয়ে সটান পরিবারে ফোন করে ওই ছাত্রী। পরিবারের লোকজন মেয়ের ফোন পেয়েই জয়পুর থানায় যান। তড়িঘড়ি ঘটনার কথা পুলিশকে জানালে জয়পুর থানার পুলিশ বিভিন্ন সূত্র কাজে লাগিয়ে পারুলিয়া এলাকা থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। পাশাপাশি জয়দেবকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পরে গ্রেফতার করা হয় পারুল এবং আসগরকে।
ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩, ৩৬৫, ৩৬৬, ৩৭৬ ও ৬ নম্বর পকসো ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। এর পর গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ধৃতদের জেল হেফাজতে রেখে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে বিচার চলছিল। বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষ্য গ্রহণের পর মঙ্গলবার বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালত তিন জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে। বুধবার দোষীদের মধ্যে জয়দেবকে ২০ বছর জেল ও ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা, আসগরকে ২০ বছর জেল ও ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং পারুলকে ৭ বছর জেল ও ৬০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা শোনায় আদালত।
বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী স্বরূপ পাঁজা বলেন, ‘‘নাবালিকাকে ফুঁসলিয়ে পাচার করে দিনের পর দিন যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তিন জনকেই আদালত দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেছে। সাজাপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ প্রাপ্ত টাকা ওই নাবালিকার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়ার কথা বলেছে আদালত।’’