হিমসাগর, ল্যাংড়াকে ল্যাং মেরে সেরা বাঁকুড়ার আম

মালদহ, মুর্শিদাবাদকে পিছনে ফেলে কলকাতার রসের প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা পেল বাঁকুড়া! রাজ্য আম মেলা প্রতিযোগিতায় প্রথম বার ডাক পেয়েই বাজিমাত করেছে জঙ্গলমহলের এই জেলা। আমের গুণগত মান, স্বাদ ও বাজারের চাহিদা—তিনটি বিভাগেই প্রথম হয়েছে তালড্যাংরার আম!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০১:১৫
Share:

অালফান্সোর ডালি তালড্যাংরার কৃষি খামারে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

মালদহ, মুর্শিদাবাদকে পিছনে ফেলে কলকাতার রসের প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা পেল বাঁকুড়া! রাজ্য আম মেলা প্রতিযোগিতায় প্রথম বার ডাক পেয়েই বাজিমাত করেছে জঙ্গলমহলের এই জেলা। আমের গুণগত মান, স্বাদ ও বাজারের চাহিদা—তিনটি বিভাগেই প্রথম হয়েছে তালড্যাংরার আম!

Advertisement

হিমসাগর, ল্যাংড়া, মল্লিকা, লক্ষণভোগ, চম্পা, গোলাপভোগকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে বাঁকুড়ার আলফান্সো ও আম্রপালি। রাজ্য ছেড়ে এই দুই প্রজাতি এখন দিল্লির আম মেলায় যাওয়ার অপেক্ষায়। জেলা উদ্যানপালন দফতরের উপ অধিকর্তা প্রভাত কারক বলেন, ‘‘আম মেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আমের গুণগত মান, বাজার মূল্য ও স্বাদের বিচার করা হয়। তিনটি বিভাগেই বাঁকুড়ার আম সবাইকে টপকে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে।”

উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের আম মেলায় রাজ্যের ১৩টি জেলা যোগ দিয়েছিল আমের সম্ভার নিয়ে। এ বারই প্রথম এই প্রতিযোগিতায় ডাক পায় বাঁকুড়া। আর প্রথম বারই সাফল্য এনে চমকে দিয়েছে রাজ্যকে। গুণগত মান ও বাজার মূল্যের বিচারে প্রথম হয়েছে বাঁকুড়ার আলফানসো। স্বাদের বিচারে প্রথম এই জেলারই আম্রপালি। তিন বছর আগে গোয়া থেকে আলফান্সোর চারা এনে উদ্যানপালন দফতরের তালড্যাংরার কৃষি খামারে চাষ শুরু করা হয়। বর্তমানে খামারের ৫ হেক্টর জমিতে ওই চাষ হচ্ছে। আবার তিন বছর আগেই বাঁকুড়ার উদ্যানপালন দফতরের কাছ থেকে চারা নিয়ে নিজের ১৮৪ বিঘা জমিতে আমচাষ শুরু করেছিলেন বাঁকুড়ার দামোদরপুরের সিদ্ধার্থ সেন। এ বার সিদ্ধার্থবাবুর আম্রপালি ও জেলা উদ্যানপালন দফতরের আলফানসো-সহ ন’টি প্রজাতির আম বাঁকুড়া থেকে আম মেলায় যায়। ভারত সরকারের জাতীয় উদ্যানপালন মিশনের উদ্যোগে কলকাতার আলিপুর এগ্রিকালচার অ্যান্ড হর্টিকালচার সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া-র উদ্যানে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছিল তিন দিনের আম মেলা। শনিবারই তিনটি বিভাগে বাঁকুড়ার আমকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, বিকল্প চাষের সন্ধানে বাঁকুড়ার মাটিতে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছে জেলা উদ্যানপালন দফতর। বিশেষ সাফল্য পেয়েছে আঙুর চাষ। কেন্দ্রীয় সরকারের কানেও গিয়েছে বাঁকুড়ায় আঙুর চাষের সাফল্যের কথা। একশো দিনের প্রকল্পে আমবাগান গড়ে গ্রামীণ অর্থনীতি বদলানোর দিকেও পদক্ষেপ করেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। এই প্রকল্পে কয়েক’শ আমবাগান গড়ে দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে তা দেখভাল করে বাজারে আম বিক্রি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে স্থায়ী সম্পদ বানানোর জন্য জেলা প্রশাসন কেন্দ্রীয় পুরস্কারও পেয়েছে। এ বার কলকাতার আম মেলায় এই জেলার আমের স্বীকৃতি পাওয়াতে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আকারে আম চাষ হবে বলেই মনে করছে উদ্যানপালন দফতর। প্রভাতবাবু বলেন, “মালদা, মুর্শিদাবাদের চেয়েও এই জেলায় ভাল আম হতে পারে জেনে অনেক ব্যবসায়ী ও চাষিরা এগিয়ে আসবেন বলে আমি আশাবাদী।’’ তাঁর সংযোজন, “বিকল্প চাষের ব্যপক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও এখানকার চাষিরা ধান ও আলুতেই আটকে রয়েছেন। তাঁদের উৎসাহিত করাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য।’’ আমচাষি সিদ্ধার্থবাবু বলেন, “পতিত কাঁকুরে ১৮৪ বিঘা জমিটি আমার পড়েই ছিল। উদ্যানপালন দফতরের কথাতেই আমচাষে পা বাড়িয়েছিলাম। ওই মাটিতে যে রাজ্যের সেরা আম হবে স্বপ্নেও ভাবিনি!”

উদ্যানপালন দফতরের কর্মী সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, “আম মেলায় আমাদের জেলা ডাক পেত না। প্রথম বারেই চমক দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’ রাজ্যে সেরা হয়ে বাঁকুড়ার এই দুই প্রজাতির আম যাবে দিল্লিতে। সেখানেও বাজিমাত হয় কি না, এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন