‘এ আবার কেমন মশকরা? বলি চায়ের সঙ্গে ইয়ের কী সম্পর্ক?’

প্রৌঢ় এ বার গেলেন চটে, ‘‘এ আবার কেমন মশকরা? বলি চায়ের সঙ্গে ইয়ের কী সম্পর্ক?’’

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বড়ঞা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৯
Share:

প্রতিভা।

বর্ষার মেঘে ভরসা নেই!

Advertisement

ঝেঁপে নামল সাতসকালেই। শিকেয় উঠল বাজার করা। মাথা বাঁচাতে ফাঁকা থলে নিয়ে চায়ের দোকানে ঢুকলেন এক প্রৌঢ়, ‘‘কই হে, কড়া করে একটা চা দাও দিকি!’’

একগাল হাসলেন চায়ের দোকানদার, ‘‘সে না হয় দিচ্ছি। তার আগে বলুন তো, সকালের ইয়েটা শৌচাগারে সেরেছেন নাকি মাঠে?’’

Advertisement

প্রৌঢ় এ বার গেলেন চটে, ‘‘এ আবার কেমন মশকরা? বলি চায়ের সঙ্গে ইয়ের কী সম্পর্ক?’’

দোকানদারের গলা এ বার আরও মিঠে, ‘‘বৃষ্টিমাথায় ঢুকেছেন বলে দোকানের সামনের ফ্লেক্সটা বোধ হয় কাকার নজরে আসেনি। শুনুন, শৌচাগার ব্যবহার না করলে আমার দোকানে চা মিলবে না।’’

মুর্শিদাবাদের বড়ঞায় রাস্তার পাশেই চায়ের দোকান পলাশ ঘোষের। তার কয়েকটি দোকান পরেই এককড়ি দাসের সেলুন। সেখানেও ঝুলছে আর একটি ফ্লেক্স। এক ধাপ এগিয়ে এককড়ির ঘোষণা, ‘‘চুল-দাড়ি কাটব না আর, যদি না থাকে শৌচাগার!’’

পলাশ, এককড়ির এমন কাণ্ড দেখে বড়ঞাও এখন মালিকের নাম ভুলে বলতে শুরু করেছে, নির্মল চায়ের দোকান বা নির্মল সেলুন! জেলা প্রশাসনও অবশ্য ওই দুই ব্যবসায়ীর উদ্যোগে বেজায় খুশি। জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘জেলাকে নির্মল করতে আমরা উঠেপড়ে লেগেছি। এই অবস্থায় ওই দুই ব্যবসায়ী স্বেচ্ছায় যা করেছেন তা কুর্নিশ করার মতো।’’

কিন্তু কে সত্যি বলছেন আর কে মিথ্যে বলছেন তা বুঝবেন কী করে? পলাশ ও এককড়ি সমস্বরে বলছেন, ‘‘হাতের তেলোর মতো এ তল্লাট চিনি। আমাদের দোকানে যারা আসে তারাও পরিচিত। ফলে মিথ্যে বলে লাভ নেই।’’

‘টয়লেট, এক প্রেম কথা’ না দেখলেও তার গল্প শুনেছেন পলাশ ও এককড়ি দু’জনেই। সংবাদমাধ্যমে পড়েছেন, শৌচাগার নেই বলে বিয়ে ভাঙার কথাও। নিজেদের জেলাতেও তাঁরা দেখেছেন, জেলাকে নির্মল করতে ভোরে হুইসল নিয়ে মাঠে ছুটছেন বিডিও, ওসি।

কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হবে জেনেও এমন সিদ্ধান্ত কেন? বছর ছত্রিশের পলাশ বলছেন, ‘‘দু’কাপ চা হয়তো কম বিক্রি হবে। কিন্তু শৌচাগারটা হোক।’’ আর এককড়ির কথায়, ‘‘অসম থেকে আমেরিকা, ট্রাম্প থেকে চাঁদে জমি— সেলুনের আড্ডায় উঠে আসে সব
কিছুই। সবাই সবার ভুল ধরে। আর নির্মল জেলা নিয়ে এত প্রচারের পরে তাদেরই কেউ কেউ সকালে বেছে নেয় সেই মাঠ! তাই ফ্লেক্সটা টাঙিয়েই দিলাম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন