বিয়ে পরে, জীবনের গল্পে শেখায় লিপি

শিক্ষিকাদের উদ্যোগে চাইল্ড লাইন গিয়ে বিয়ে আটকায়। পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে ঢলদিঘির একটি হোমে রাখে। তাতেও দমে যায়নি সে। নাবালিকা বিয়ে রুখতে নিজেই প্রচার শুরু করে। এ বার একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বরও পেয়েছে লিপি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ১১:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বয়স তখন মেরেকেটে ১৫। মাধ্যমিক পাশ করার পরেই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল পরিবার। বেঁকে বসে ইছলাবাদ গার্লস স্কুলের ছাত্রী লিপি বিশ্বাস।

Advertisement

শিক্ষিকাদের উদ্যোগে চাইল্ড লাইন গিয়ে বিয়ে আটকায়। পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে ঢলদিঘির একটি হোমে রাখে। তাতেও দমে যায়নি সে। নাবালিকা বিয়ে রুখতে নিজেই প্রচার শুরু করে। এ বার একাদশ শ্রেণিতে কলা বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বরও পেয়েছে লিপি।

প্রধান শিক্ষিকা ভাস্বতী লাহিড়ি বলেন, “পড়ুয়াদের বিয়ে আটকানোর রেওয়াজ যখন শুরু হয়নি, তখন থেকেই লিপি ক্লাসে ক্লাসে প্রচার করত। ওই স্কুলের কন্যাশ্রীর মুখ।” অন্য শিক্ষিকারা জানান, মাধ্যমিকে লিপি খুব ভাল নম্বর পায়নি। তবে হোমে যাওয়ার পরে তার জীবনে বদল আসে। এখন প্রতিটি ক্লাসে গিয়ে নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে বলে, ‘আমি বিয়ে না করে পড়ছি। এগিয়ে চলেছি। তোমরাও আঠারোর নীচে বিয়ে কোরো না।’’ কন্যাশ্রী নিয়ে প্রশাসনের এক সভাতেও সকলকে চমকে দিয়ে লিপি বলে উঠেছিল, “বাবা-মায়ের বোঝা উচিত মেয়ে মানে দায় নয়। আমরাও পড়াশুনো করে রোজগার করে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারি।”

Advertisement

ইছালাবাদের হ্যাচারি রোডের ক্যানেল পাড়ে লিপিদের বাড়ি। ছ’ভাই-বোনের সংসার। বাবা জগদীশ বিশ্বাস কাঠের মিস্ত্রি। দিন আনি, দিন খাই পরিবারে বড় মেয়ে মাধ্যমিক দেওয়ার পরেই বিয়ে ঠিক করে ফেলেন তাঁরা। বিয়ে বন্ধ বলেও পড়ার পরিবেশ ছিল না। এরপরেই পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠায়। হোম থেকে ফিরেও সারাদিন পড়ায় ডুবে থাকত লিপি।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, হোম থেকে ফেরার পরেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করে নেওয়া হয় লিপিকে। স্কুল থেকেই বই-খাতা দেওয়া হয়। নিয়মিত পড়া দেখিয়েও দেন শিক্ষিকারা। ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’ হওয়ার আগেই লিপি কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে টিফিনের সময় ‘আঠারোর নীচে বিয়ে করা উচিত নয়’ বলে প্রচার চালাতে শুরু করে। এখন স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাব ‘জাগরণীর’ সভানেত্রী সে। ক্লাসে প্রচারের পাশাপাশি প্রত্যেক বুধবার ছাত্রীদের নিয়ে ‘গ্রুপ মিটিং’ করে নাবালিকাদের কেন বিয়ে করা উচিত নয় তা বোঝায়। লিপির বান্ধবীরা বলে, “স্কুলের বাইরেও ও প্রচার করে। নাবালিকা বিয়ের খবর পেলেই দিদিমনিদের জানাতে বলে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন