ধর্মরাজের পুজোয় ধান দেন রহিমেরা

গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুর রহিম বলেন, “প্রতি বছর ধর্মরাজের পুজোর জন্য আমাদের বাড়ি থেকে ধান দেওয়া হয়। এই প্রথা পুরুষানুক্রমে চলে আসছে। পুজোর পরে সেই প্রসাদ আমরা সকলেই নিই।”

Advertisement

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৭:২০
Share:

মঙ্গলকোটের মহিষগড়িয়ায় চলছে খাওয়াদাওয়া। নিজস্ব চিত্র

গ্রামের আরাধ্য দেবতাকে ভোগ নিবেদন না করা পর্যন্ত কেউ পৌষল্যা বা চড়ুইভাতি করতে পারবেন না, নিয়ম চলে আসছে বহু বছর ধরে। পৌষ মাসের ২০ তারিখের পরে মঙ্গলবার নিবেদন করা হয় সেই ভোগ। তার পরেই এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়ায় সামিল হয় গোটা গ্রামের। মঙ্গলকোটের মহিষগড়িয়ায় ধর্মরাজ সুন্দরগোপাল রায়ের পুজোয় সেই ভোগের জন্য ধান দেয় সংখ্যালঘু পরিবার।

Advertisement

গ্রামবাসী চণ্ডীদাস মণ্ডল, বনমালি মণ্ডলদের দাবি, প্রায় ২৫০ বছর ধরে এই পুজো চলে আসছে। প্রতি বছর বৈশাখের বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন পুজো হয়। তবে পৌষের কোনও মঙ্গলবার দেবতার পৌষল্যা হয়। ধান থেকে খই তৈরি করে ধর্মরাজের ভোগ নিবেদন করা হয়। তা বিতরণ করা হয় গ্রামবাসীদের মধ্যে। গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুর রহিম বলেন, “প্রতি বছর ধর্মরাজের পুজোর জন্য আমাদের বাড়ি থেকে ধান দেওয়া হয়। এই প্রথা পুরুষানুক্রমে চলে আসছে। পুজোর পরে সেই প্রসাদ আমরা সকলেই নিই।”

গ্রামের বাসিন্দা বিনয়চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘ধর্মরাজের পৌষল্যার আগে গ্রামের কেউ কোথাও পিকনিক করতে পারেন না। এই দিনে গ্রামের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এক সঙ্গে ঠাকুরতলায় বসে পৌষল্যা করা হয়।” সে দিন গ্রামে কোনও বাড়িতে রান্না চড়ে না। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ গ্রামের বাইরেও যান না। পুরুষ, মহিলা সকলে মিলে রান্নার কাজ করেন। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই আত্মীয়স্বজনেরা আসেন। পৌষল্যা উপলক্ষে গ্রামে আসা সুরভি মণ্ডল বলেন, “ছোটো থেকেই এই উৎসবে থাকি। সকলে মিলে এক সঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া হয়। খুব ভালো লাগে। স্থানীয় কাশেমনগর বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া আকাশ মণ্ডল, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া সৌম্যদীপ সরকারেরা বলে, “শীতের শুরু থেকেই বন্ধুরা বিভিন্ন জায়গায় পিকনিকে যায়। কিন্তু আমরা এই অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা করে থাকি।”

Advertisement

গ্রামবাসীরা জানান, পৌষল্যার জন্য বর্ধমান রাজার দান করা ধর্মরাজের নিজস্ব জমি রয়েছে। তা ছাড়াও গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছায় নানা জিনিসপত্র দেন। বুধবার দুপুরে খিচুড়ি, দু’রকম তরকারি, পায়েস, চাটনি এবং মিষ্টি সহযোগে খাওয়াদাওয়া হল গ্রামে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন