এই দরজা দিয়েই ঢুকেছিল চোর, দাবি তদন্তে। নিজস্ব চিত্র
নিরাপত্তার দায়িত্বে তিন পুলিশকর্মী। সঙ্গে যোগ দিলেন আরও পুলিশকর্মী। সকলে মিলে বসালেন মদের আসর। ফাঁক তালে পরে আসা ওই পুলিশকর্মীই খুলে দিলেন দরজা। আর তার পরেই নিরাপত্তারক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে ভল্ট ভেঙে লোপাট টাকা। বর্ধমানে ট্রেজারি ভবনে টাকা লোপাটের ঘটনায় এটাই ছিল ‘ছক’। ঘটনায় পুলিশকর্মী-সহ চার জনকে গ্রেফতার করে এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের।
পশ্চিম বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “ধৃতরা, বর্ধমান পুলিশ লাইনের কনস্টেবল সুরজিৎ সিংহ মুড়া, তাঁর বোন অন্নপূর্ণা মণ্ডল, আত্মীয় সুপ্রিয় মল্লিক ও গোপীকৃষ্ণ অধিকারী।’’ সুরজিৎ ও অন্নপূর্ণা বাঁকুড়া শহরে থাকত। বাকি দু’জনের বা়ড়ি, বাঁকুড়ারই কোতুলপুরে। পুলিশ জানায়, সুরজিৎকে বর্ধমান থেকে, বাকিদের বাঁকুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের শুক্রবার আদালতে তোলা হলে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ২৭ অক্টোবর, সপ্তমীর সন্ধ্যায় ট্রেজারি ভবনের একতলায় ভাড়া নেওয়া ভল্টে ১ কোটি ১৯ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা রেখেছিল রেখে এসেছিল বর্ধমানের মুখ্য ডাকঘর। নবমীর সকালে, ২৯ সেপ্টেম্বর পেনশন প্রাপকদের দেওয়ার জন্য ওই টাকা আনতে গেলে ডাকঘরের কর্মীরা দেখেন ৫৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা চুরি গিয়েছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ অন্তত ১২ জন বিভিন্ন সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তদন্তকারীরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সপ্তমীর দিন ‘নিরাপত্তা রক্ষা’র দায়িত্ব না থাকা সত্ত্বেও ওই দিন রাত আটটা নাগাদ ট্রেজারি ভবনে যান সুরজিৎ।
সেখানে গিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তিন জন পুলিশকর্মীর সঙ্গে মদের আসর বসান সুরজিৎ। তদন্তকারীদের দাবি, আসর চলাকালীন শৌচাগার যাওয়ার নাম করে ট্রেজারি ভবনের পিছনের দরজাটি খুলে দেন সুরজিৎ। তারপরে সুরজিতের আত্মীয়, পেশায় কাঠমিস্ত্রি গোপীকৃষ্ণ ভিতরে ঢুকে সোজা ভল্টের কাছে পৌঁছে যায়। মদের নেশায় মশগুল নিরাপত্তারক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে টাকা লোপাট করাটাও কঠিন হয়নি বলে দাবি পুলিশের। পুলিশ সুপার জানান, বাইরে দাঁড়িয়ে চার দিকে ‘নজর’ করছিলেন অন্নপূর্ণা ও সুপ্রিয়।
পুলিশ জানায়, সুরজিৎ মাস দুয়েক আগে ট্রেজারি ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। তাই মাঝেসাঝেই বাকিদের সঙ্গে আড্ডা দিতে রাতে ট্রেজারি ভবনে যেতেন ওই পুলিশকর্মী। সপ্তমীর রাতেও তাই সুরজিৎকে দেখে সন্দেহ হয়নি অন্যান্য পুলিশকর্মীদের। তদন্তকারীরা জানান, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, সুরজিতের তিন আত্মীয় ঘটনার আগে অন্তত তিন দিন ‘রেইকি’ করে গিয়েছে ট্রেজারি ভবন।
তবে চার জনকে ধরা হলেও লোপাট টাকার মাত্র ৩০ হাজার টাকাই এ পর্যন্ত উদ্ধার করা গিয়েছে। কী কারণে এই চুরি, তা এখনও জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিতে সুরজিতের বাবা-মাকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বর্ধমান নিয়ে এসেছে।
পুলিশ সুপার জানান, ট্রেজারি ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ওই তিন পুলিশ কর্মীকে ‘ক্লোজ’ করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।