সন্ধ্যা থেকেই বাড়ির চারপাশে মোতায়েন ছিলেন পুলিশকর্মীরা। পরে সুযোগ বুঝে পরিত্যক্ত বাড়িতে চলল অভিযান। বিহারের চার জন এবং বর্ধমানের তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার ভোরে বর্ধমানের শহরের গোদার ঘটনা। জেলা পুলিশের দাবি, ধৃতেরা বর্ধমানে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত ছিল। এ দিনও তাদের উদ্দেশ্য ছিল, শহরের একটি দোকানে হানা দেওয়ার। ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্রও মিলেছে।
বর্ধমান থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিন-চার দিন আগেই খবর মেলে, গোদায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের পিছনের দিকের একটি গলির ভিতরে সাদা রঙের পরিত্যক্ত বাড়িতে পিস্তল ও গাঁজার কারবার চলছে। খবর পাওয়ার পরেই পুলিশের একটি দল সাদা পোশাকে বাড়ির উপরে নজর রাখতে শুরু করে। রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশের নজরদারি দল তিন জন যুবককে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেখে। পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের দাবি, “এর পরেই বর্ধমান থানা থেকে পুলিশের আরও একটি দল ওই বাড়িতে নজর রাখে। রাতের দিকে একটি গাড়িতে করে ফের চার যুবক নামে। ওদের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় বর্ধমান থানার ১০ জনের একটি দল ওই বাড়িকে ঘিরে রাখে। ভোরের দিকে সেখানে হানা দিতেই ওদের উদ্দেশ্য ধরা পড়ে যায়।”
পুলিশ জানায়, অভিযান চালিয়ে বর্ধমান শহরের বাসিন্দা অজয় দাস, অজয় মণ্ডল, অজিত রাউত এবং তাদের সঙ্গী বিহারের লখিসরায় থানা এলাকার বাসিন্দা ঋতেশকুমার রাম, সঞ্জিতকুমার বিন্ত, রঞ্জিতকুমার বিন্ত ও অভিষেককুমার মণ্ডলকে ধরা হয়েছে। বিহারের চার জনের বিরুদ্ধে বিহারে দু’টি খুনের মামলা চলছে বলে পুলিশ জানায়। এর মধ্যে একটি মামলায় চার্জশিট জমা পড়েছে। অন্যটিতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে একটি ৭.৬ এমএম পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলি, তিনটে ওয়ান শাটার পাইপ গান, ৮ রাউন্ড গুলি মিলেছে। এ ছাড়াও ৮টি মোবাইল ও ৫ হাজার টাকা ও ২৫ কিলোগ্রাম গাঁজাও পাওয়া গিয়েছে ধৃতদের কাছ থেকে। পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘ধৃতেরা জেরায় সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া বর্ধমান শহরের চারটি ঘটনায় যুক্ত ছিল বলে স্বীকার করেছে। তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ওই দলের বাকিদেরও ধরা হবে।”
তদন্তকারীরা জানান, শহরের পার্কাস রোডের একটি বৈদ্যুতিন যন্ত্রের দোকানে হানা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল এই দলটির। এর জন্য ধৃতদের কয়েক জন এলাকা রেইকিও করে গিয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বছর ডিসেম্বরে রাতের দিকে নবাবহাটে একটি মার্বেলের দোকানে হানা দিয়েছিল ওই দলটি। তারা দোকানের অংশীদার সনু কর্মকার বর্মনকে গুলি করে দোকান থেকে তিন লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। আবার গোলাপবাগের অন্ধকার রাস্তায় এক ব্যক্তিকে বন্দুক দেখিয়ে ছিনতাই-সহ মোট চারটি ঘটনাতেও তারা যুক্ত। পুলিশ সুপার জানান, সব সময়ে সাত জন একসঙ্গে থাকত, এমনটা নয়। তিন-চারজন মিলেও অনেক সময়ে ঘটনা ঘটিয়েছে। তার পরেই তারা বিহারে চম্পট দিত।