জন্মদিনে উপহার, পরদিনই ‘অপহরণ’

ওই দিনই শেখ রবিউল নামে আরও এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় রবিউল জানিয়েছে, প্রায় কুড়ি দিন ধরে অপহরণের ছক কষেছিল রাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শক্তিগড় শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

পুজোর কিছু দিন আগে গাড়ি কিনেছিলেন শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ী। তখন থেকেই চালকের কাজ করত জামির হোসেন ওরফে রাজ। প্রথম দিনেই ব্যবসায়ীর পাঁচ বছরের ছেলের ‘বন্ধু’ হয়ে গিয়েছিল সে। স্কুলে নিয়ে যাওয়া, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া এমনকি, নিয়ম করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ছেলেটির সঙ্গে সময় কাটাত সে। শনিবার শিশুটির জন্মদিনে উপহারও দিয়েছিল সে। বাড়ির লোকেরাও নিশ্চিন্তে ভরসা করতেন তাঁর উপরে। রবিবার ওই শিশু ‘অপহরণ’, পরে উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, পুরোটাই ছিল ধৃত রাজের ছক।

Advertisement

ওই দিনই শেখ রবিউল নামে আরও এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় রবিউল জানিয়েছে, প্রায় কুড়ি দিন ধরে অপহরণের ছক কষেছিল রাজ। সেই পরিকল্পনা থেকেই চালকের কাজ নেয়। ওই ব্যবসায়ীর কাছে টাকা চেয়ে না পেয়ে রাজ ওই পরিকল্পনা করে বলেও দাবি তার।

রবিবার বেলা ১১টার পর থেকে খোঁজ মিলছিল না ওই ব্যবসায়ী বলিরাম ওঝার পাঁচ বছরের ছেলের। কয়ের ঘণ্টা পরে পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে। টাকা দেওয়ার আগেই বিকেলের দিকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কাঁদোসোনা গ্রামের দিঘির পাড়ের কাঁটা ঝোপ থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করেন ওই শিশুকে। পুলিশের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই শিশুকে দোকান লাগোয়া বাড়ি থেকে বার করে হাঁটিয়ে গাড়িতে তোলে রাজ। পুলিশের ধারণা, রাজ নিজেই গাড়ির ভিতর ক্লোরোফর্ম জাতীয় কিছু দিয়ে অজ্ঞান করে শিশুটিকে। তারপরে হাত-পা বেঁধে, পরে গলায় প্লাস্টিকের স্ট্রিপ দিয়ে ফাঁস লাগায়। একটু দূর গিয়ে গাড়ি ঘোরানোর সময় ওই শিশুকে ডিকিতে ঢোকানো হয়। কিছুক্ষণ পর থেকে বাড়িতে খোঁজ পড়ে ছেলের। পুলিশের দাবি, রাজ তাঁদের বোঝায় অন্য একটি লাল রঙের গাড়ি শিশুটিকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। যদিও পুলিশ তদন্তে নেমে দেখে, অন্য গাড়িটি ওই সময়ে ঘটনাস্থলে ছিল না।

Advertisement

বলিরামবাবু বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না ছেলের খোঁজে যখন হন্যে হয়ে ঘুরছি তখন ও গাড়িতেই ছিল। যাঁকে কাজ দিয়ে এত ভরসা করলাম, সে এমন কে জানত!’’

ধৃত বছর একুশের রাজের বিরুদ্ধে আগেও জুয়া খেলা, চুরির নানা অভিযোগ রয়েছে, জেনেছে পুলিশ। জামালপুর চক্ষণজাদি গ্রামের ওই যুবক এ সব পরিকল্পনা করে গত কয়েক মাস ধরে বড়শুলে ভাড়া থাকত বলেও জানা গিয়েছে। রবিবার রাতে পালানোর সময় বড়শুলের আন্ডারপাস থেকেই নিষিদ্ধ মাদক-সহ রাজকে ধরে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃতের মোবাইল তল্লাশি করে জানা গিয়েছে বেলা দেড়টা থেকে ৩টে ১০ মিনিট পর্যন্ত রবিউলকে দু’শো বার ফোন করে বলিরামবাবুকে হুমকি দেওয়ার জন্য জোর করেছে রাজ।

কাঁদোসোনা গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, গত দু’সপ্তাহ ধরে বলিরামবাবুকে গাড়ি চালানো শেখাতে ওই গ্রামের মাঠে যেত রাজ। গ্রামের হালহকিকত ভালই জানা ছিল তার। ফলে হাত-পা বাঁধা অচেতন শিশুটিকে দ্রুত ঝোপে ফেলে ফিরে গিয়েছিল সে। পরে বিপদ আঁচ পেয়ে পালায়।

পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাক্রম দেখে বোঝা যাচ্ছে, চালকই শিশুটিকে অপহরণ করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরায় আরও তথ্য মিলতে পারে।’’ এ দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে শিশুটি।

জামালপুরের চক্ষণজাদি গ্রামের বাসিন্দা, ধৃতের মা বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না ছেলে এ সব করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন