Digital Arrest

‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ হলেন বর্ধমানের ‘সাধুবাবা’! কিছু মিলবে না বুঝে প্রণাম করে রণে ভঙ্গ দিল ‘পুলিশ’

এলাকাবাসীর কাছে সাত্ত্বিক এবং জ্ঞানী মানুষ হিসাবে তিনি পরিচিত। কিন্তু ওই সাধকও পড়েছিলেন ডিজিটাল জালিয়াতদের খপ্পরে। বেশ কিছু ক্ষণ ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ ছিলেন ‘সাধুবাবা’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:০২
Share:

তিব্বতি বাবার আশ্রমের আশ্রমিক অশোক চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

সাইবার ঠগদের ‘লম্বা হাত’ ছাড়ল না সর্বত্যাগী সাধুকেও। ভিডিয়ো কলে যে অভিজ্ঞতা হল তাঁর, তাতে শঙ্কিত এবং ভীত পূর্ব বর্ধমানের পালিতপুর তিব্বতি বাবার আশ্রমের আশ্রমিক অশোক চক্রবর্তী।

Advertisement

বর্ধমান শহরের বেশ খানিকটা দূরে পালিতপুর গ্রাম। সেখামে রয়েছে তিব্বতি বাবার আশ্রম। বহু পুরনো ওই আশ্রমের বেশ কিছু জমি এবং সম্পত্তি রয়েছে। বর্তমানে আশ্রমের দায়িত্বে রয়েছেন অশোক। এলাকাবাসীর কাছে সাত্ত্বিক এবং জ্ঞানী মানুষ হিসাবে তিনি পরিচিত। কিন্তু ওই সাধকও পড়েছিলেন ডিজিটাল জালিয়াতদের খপ্পরে। বেশ কিছু ক্ষণ ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ ছিলেন তিনি। অশোক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে একটি অচেনা নম্বর থেকে একটি ফোন আসে তাঁর কাছে। ‘হ্যালো’ বলতেই ফোনের ও প্রান্ত থেকে গুরুগম্ভীর গলায় ভেসে আসে সাবধানবাণী। সাধুর কথায়, ‘‘আমাকে বলা হয়, আমার নামে অনেকগুলি মামলা আছে। পরে সংখ্যা বলা হয়। জানানো হয়, মহারাষ্ট্রের তিলকনগর থানায় আমার নামে মোট ১৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। তার পর ওই ব্যক্তি বলেন, ‘কিছু ক্ষণ পর আপনার ফোন আর চলবে না। আমরা ফোন কোম্পানি থেকে কল করছি।’ এখানেই আমার সন্দেহ হয়। তার পর আমাকে বলা হয়, ‘আপনাকে একটি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আপনাকে ভিডিয়ো কল করা যেতে পারে?’ আমি বলি, ‘হ্যাঁ। নিশ্চয়ই।’’’

শুরু হয় ভিডিয়ো কল। অশোক দেখেন, পুলিশের পোশাকে এক জন বসে আছেন। তিনি একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন তাঁকে। কী করেন, কোথায় থাকেন, আয়ের উৎস কী, এ সব জানতে চাওয়া হয়। সাধু বলেন, ‘‘আমাকে উনি জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার আয়ের উৎস কী? দিন চলে কী ভাবে?’ আমি জবাবে বলি, ‘ভিক্ষে করি না। আমার কোনও সম্পত্তিও নেই। যারা আশ্রমে আসে, তারা যা দেয়, তা দিয়ে চলে যায়।’ তার পরে আমাকে আশ্বস্ত করে পুলিশের বেশধারী ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনার কোনও চিন্তা নেই।’’’

Advertisement

অশোকের দাবি, তাঁকে কথার মাঝেই পুলিশের উর্দিধারী ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘আপনাকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হল’। আপনার অ্যাকাউন্টে (ব্যাঙ্ক) কী কী আছে, সব জানান। যেখানে থাকেন, ঘুরিয়ে দেখান।’’ কথা মতো আশ্রমের চারপাশ দেখাতেই খানিক থমকে যান ওই ব্যক্তি। প্রতারকেরা হয়তো বুঝতে পারেন, সাধুর কাছে কিছুই পাওয়া যাবে না। সব কিছু দেখার পর অশোকের কাছে আশীর্বাদ চেয়ে বসেন সেই ‘পুলিশ’। ভিডিয়ো কলটি কেটে যায়। অশোক বলেন, ‘‘ তার পর থেকে আমি খুবই ভয়ে রয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। কিন্তু এ ভাবে যদি প্রযুক্তির অপব্যবহার চলতে থাকে, কত মানুষের ক্ষতি হবে! পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’

বস্তুত, ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ নিয়ে চিন্তিত প্রশাসনও। ফোন করে বা অন্য কোনও উপায়ে ওটিপি নম্বর জেনে নিয়ে টাকা হাতানোর কৌশল এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে। এখন সাইবার অপরাধীরা আরও ‘উন্নত’ কৌশলে জাল বিস্তার করছেন। তাতে পা দিয়ে ফেলছেন অনেকেই। বার বার প্রশাসনের তরফে সতর্ক করা হচ্ছে। এ নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement