HS Examination 2023

টোটো চালানোর ফাঁকেই পড়া অরূপের

টোটো চালানোর ফাঁকে সময় পেলে বইয়ের পাতায় চোখ বোলায় অরূপ। মঙ্গলবার উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম দিন সহদেববাবুকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা নিয়ে যেতে হয়েছিল।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৭
Share:

অরূপ সিংহ। নিজস্ব চিত্র

বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসার টাকা এবং সংসার চালানোর খরচ ওঠে টোটো চালিয়ে। তার ফাঁকেই চলে পড়াশোনা। প্রতিকূলতা জয় করে সমুদ্রগড় নতুনপাড়া কলাবাগান এলাকার অরূপ সিংহ এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে।

Advertisement

টালির ছাউনির টিনের বাড়িতে অরূপ থাকে মা-বাবার সঙ্গে। পড়াশোনা করে সমুদ্রগড় উচ্চবিদ্যালয়ে। পড়শিরা জানিয়েছেন, অরূপের বাবা সহদেব সিংহ টোটো চালাতেন। বছর খানেক আগে তিনি অসুস্থ হন। কথা বলতে গেলে গলায় ব্যথা হত। কষ্ট হল খাবার গিলতে। মাস ছয়েক আগে তাঁর গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে। সংসারের এক মাত্র রোজগেরে সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়েই বাবার টোটো নিয়ে অরূপকে নেমে পড়তে হয় রাস্তায়। সমুদ্রগড়, নিমতলা, শ্রীরামপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় টোটো চালিয়ে কোনও দিন আয় হয় ৩০০ টাকা, কোনও দিন তারও কম। বাড়ি ফিরে সারাদিনের রোজগার অরূপ তুলে দেয় মায়ের হাতে। সে টাকাতেই চলে বাবার চিকিৎসা ও সংসার।

টোটো চালানোর ফাঁকে সময় পেলে বইয়ের পাতায় চোখ বোলায় অরূপ। মঙ্গলবার উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম দিন সহদেববাবুকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা নিয়ে যেতে হয়েছিল। সকাল ৯টা নাগাদ বাবা এবং মা রমা দেবীকে টোটোয় চাপিয়ে সমুদ্রগড় স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে অরূপ সোজা যায় পরীক্ষাকেন্দ্র পারুলডাঙা নসরৎপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে পৌঁছে অরূপ দেখে, অ্যাডমিট কার্ড বাড়িতে ফেলে এসেছে সে। এক সিভিক ভলান্টিয়ারের সাহায্যে কার্ড এনে পরীক্ষায় বসে সে।

Advertisement

ছেলের লড়াইয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই মায়ের চোখে জল আসে। তিনি বলেন, ‘‘ওর বাবা কয়েক মাস ধরে অসুস্থ। অভাবের কারণে ছেলেকে গৃহশিক্ষক দিতে পারিনি। সংসার টানতে ওকে দিনরাত টোটো চালাতে হয়। তার মধ্যেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে ছেলে।’’ তিনি জানান, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে স্বামীর চিকিৎসা হলেও, বেশ কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। কয়েকজন আত্মীয় অবশ্য তাঁদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন। অরূপের মায়ের আর্জি, ‘‘কেউ পাশে না দাঁঢ়ালে ছেলেটার পড়াশোনা করা মুশকিল।’’ অরূপের বাবা বলেন, ‘‘ছেলেটা হাল ধরেছে বলে কোনও রকমে সংসার চলছে।’’ অরূপ বলে, ‘‘বাবার শরীর ভাল নেই। তাঁকে সুস্থ করা আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। টোটো চালানোর ফাঁকে যা সময় পেয়েছি, তাতেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’’

অরূপের লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন তার স্কুলের শিক্ষকেরা। সমুদ্রগড় উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অঞ্জন পালিতের কথায়, ‘‘অরূপ কলা বিভাগের ছাত্র। গোটা স্কুল অরূপের পাশে রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন