ফের দুর্ঘটনা ডিএসপি কারখানায়, জখম তিন

কারখানার ভিতরে গলিত ধাতু ছিটকে জখম হলেন তিন কর্মী। সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি)। তিন জনকেই বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এক জনের অবস্থা গুরুতর। মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে চিকিৎসা চলছে। ডিএসপি সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার তদন্তে কমিটি গড়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০১:৪২
Share:

হাসপাতালের বাইরে উদ্বিগ্ন সহকর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র।

কারখানার ভিতরে গলিত ধাতু ছিটকে জখম হলেন তিন কর্মী। সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি)। তিন জনকেই বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এক জনের অবস্থা গুরুতর। মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে চিকিৎসা চলছে। ডিএসপি সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার তদন্তে কমিটি গড়া হবে।

Advertisement

ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ‘বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস’ থেকে গলিত ধাতব পদার্থ নিয়ে নির্দিষ্ট ল্যাডল ‘কন্টিনিউয়াস কাস্টিং প্ল্যান্ট’-এ যায়। সেখানে ওভারহেড ক্রেনের সাহায্যে ল্যাডেল টারেট-এ বসানো হয়। এ দিন ল্যাডেল টারেটে বসানোর সময়ে কোনও ভাবে গলিত ধাতব পদার্থ ছিটকে পড়ে। জখম হন আধিকারিক রোহিত কুমার, কর্মী রঞ্জিৎ ঘোষ এবং শিক্ষানবীশ দীপক দলুই। বেশি জখম হন দীপক। সহকর্মী বিজয়কুমার নায়েক, সুভাষ মুখোপাধ্যায়দের অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েও না মেলায় তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে দীপককে প্রথমে ডিএসপি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় বিধাননগরের বেসরকারি হাসপাতালে। বাকি দু’জনকেও কারখানা কর্তৃপক্ষ সরাসরি ওই হাসপাতালে নিয়ে যান।

ঘটনার প্রতিবাদে ওই বিভাগের কর্মীরা কাজ বন্ধ করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। শ্রমিক সংগঠনগুলি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার তদন্ত, জখমদের ঠিক চিকিৎসা ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা-সহ নানা দাবি জানায়। কর্তৃপক্ষ দাবিগুলি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানায় সংগঠনগুলি। প্রায় ছ’ঘণ্টা বন্ধ থাকার পরে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ফের ওই বিভাগে কাজ শুরু হয়।

Advertisement

ডিএসপি-র জনসংযোগ বিভাগের আধিকারিক চিন্ময় সমাদ্দার জানান, ডিএসপি-র ওই বিভাগে ইস্পাতের পাত ও চাদর তৈরি হয়। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা দেখতে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ল্যাডেল টারেটে বসানো ঠিক মতো না হওয়ায় গলিত ধাতু ছিটকে পড়ে। হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার পার্থ পাল জানান, এক জন প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছেন। বাকিদের অবস্থা তুলনায় ভাল। মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে চিকিৎসা হচ্ছে।

ডিএসপিতে দুর্ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। গত বছরের মাঝামাঝি কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার সংখ্যা শূন্যে নামানোর লক্ষ্যে নিরাপত্তা বিষয়ক বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও দুর্ঘটনায় লাগাম পড়ছে না। ২০১০-এর জুলাইয়ে ২ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেসে বিষাক্ত গ্যাস ‘লিক’ করে ২৫ জন কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেলের হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সালে সাতটি দুর্ঘটনা ঘটে কারখানায়। মারা যান এক জন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে কোকওভেন প্ল্যান্টে এক ঠিকা শ্রমিক মারা যান। জখম হন দু’জন। গত ডিসেম্বরে ৩ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেস পরিষ্কার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে দুই ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

আইএনটিইউসি নেতা দেবাশিস চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নানা পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কাজ হয় না।’’ আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় কারখানায় শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়ে সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীও দাবি করেন, ‘‘ঠিক নিরাপত্তা বিধি মানা হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন