রেলিং: শনিবার এই এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনা হলে তবেই টনক নড়ে পুলিশ-প্রশাসনের। তার পরে, দিন কয়েক গেলে অবস্থা সেই আগের মতোই। শনিবার পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়কের উপরে কুনুর সেতুর কাছে ট্রাক-ট্রেলারের সংঘর্ষে এক জনের মৃত্যু হয়। তার পরে রবিবার সেই এলাকায় পুলিশি তৎপরতা দেখা গেলেও রাস্তার বাকি এলাকার অবস্থার কোনও বদল হয়নি বলে অভিযোগ।
শনিবার ওই দুর্ঘটনার পরে দু’টি গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। পুলিশ জানায়, মৃতের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ দিন সকাল থেকেই কুনুর নদীর সেতু লাগোয়া এলাকায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় পুলিশ কর্মীদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলামবাজারের দিকে যাওয়ার সময়ে কুনুর সেতুর আগে একটি বড় বাঁক রয়েছে। উল্টো দিক থেকে কোনও গাড়ি এলে দেখতে পাওয়া যায় না। তাই জায়গাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ। এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁকের প্রায় একশো মিটার দূরে লোহার অস্থায়ী ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। হেলমেট না থাকলে মোটরবাইক আরোহীদের ধরে ধরে জরিমানাও করা হয়েছ। তা ছাড়া বসুধা মোড়ের কাছে একটি ‘চেক-পোস্ট’ তৈরি করেছে পুলিশ। সকাল থেকেই সেখানে ছিলেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি (কাঁকসা) কমল বৈরাগ্য-সহ অন্য পুলিশকর্তারা। সেখানে গাড়ি চালকদের সচেতনতার পাঠ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ত্রিলোকচন্দ্রপুর, মিনি বাজার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়।
তবে দোমড়া, পিয়ারিগঞ্জ, বেলডাঙার মতো মোড়গুলিতে এ দিন কোনও কড়াকড়ি দেখা যায়নি বলে খবর। স্থানীয় বাসিন্দা সুধাংশু মণ্ডল, স্বদেশ সাহাদের দাবি, ‘‘দুর্ঘটনা ঘটলেই দিন কয়েক পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়। তার পরে যে কে সেই।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, পথ-নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা না থাকাতেই গত এক মাসের মধ্যে এই রাস্তার উপরে পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়কের বিভিন্ন জায়গায় দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে অন্তত ১০ জন যাত্রীর। এই রাস্তার উপরেই গত ২৬ মার্চ বীরভূমের পাথরচাপুড়ি মেলা থেকে ফেরার সময়ে ধোবারুর কাছে এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় পূর্বস্থলীর আট যুবকের। তা ছাড়া সপ্তাহখানেক আগে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক মোটরবাইক আরোহীর।
এই রাস্তার প্রায় ২৩ কিলোমিটার রয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা থানা এলাকায়। প্রশাসনের হিসেবে, এই এলাকায় গত এক বছরে শ’খানেক ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। অথচ এই রাস্তাটি দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার অন্যতম প্রধান রাস্তা।
পুলিশের এক কর্তার অবশ্য দাবি, পুলিশকর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের থেকে কম। তাই সব মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা অবশ্য বলেন, ‘‘গাড়ি চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয় যে সংস্থাগুলি, তাদের চালকদের সচেতনতার পাঠ দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বৈঠকও হয়েছে।’’