East Bardhaman

নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যায় বাড়ছে উদ্বেগ

কেন্দ্রের রিপোর্টে জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে নাবালিকা গর্ভধারণের হার বেশি বলে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, নাবালিকা গর্ভধারণের প্রভাব পড়েছে প্রসূতি ও শিশুমৃত্যুতেও।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের। কর্তাদের দাবি, নাবালিকাদের গর্ভধারণ বাড়ায় প্রসূতি মৃত্যুর হারও পূর্ব বর্ধমান তুলনামূলক বেশি। বিষয়টি নিয়ে নিবিড় প্রচার শুরু করতে চলেছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলার নেতৃত্বে বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা খুঁজে বার করার জন্য ‘অ্যাডলোসেন্ট সেল’ গঠন করা হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ব্লক স্তর পর্যন্ত অ্যাডলোসেন্ট সেন্টার গঠন করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ আটাকাতে নিচু স্তর পর্যন্ত পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নাবালিকাদের গর্ভধারণের ঝুঁকি সম্পর্কেও সচেতন করা হচ্ছে।’’

জেলার শীর্ষ প্রশাসনিক মহলের দাবি, রাজ্য সরকারের নিজস্ব সমীক্ষার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভের’ সাম্প্রতিক রিপোর্টে জেলার নাবালিকাদের গর্ভধারণের যে ছবি উঠে এসেছে, তা উদ্বেগের। রিপোর্ট বলছে, এনএফএইচএস ৪-এ (২০১৫-১৬) অবিভক্ত বর্ধমানে ১৫ থেকে ১৯ বছরের মেয়েদের গর্ভধারণের হার ছিল ১৪.৪ শতাংশ। এনএফএইচএস ৫-এ তা বেড়ে হয়েছে ১৬.৪ শতাংশ। পূর্ব বর্ধমানে নাবালিকা গর্ভধারণের হার ২১.৯ শতাংশ। রাজ্যের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯-২০ সালে ১৫ থেকে ১৯ বছরের মেয়েদের গর্ভধারণের হার ছিল ২৬.৫৪ শতাংশ। ২০২০-২১ সালে তা হয়েছে ২৬.১৬ শতাংশ। জেলায় ৬৫,০১৬ জন প্রসব করেছেন এই সময়ে। তার মধ্যে নাবালিকা প্রসূতি ১৭,৪৪৭ জন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এ বছরের প্রথম তিন মাসের ছবিটা আরও উদ্বেগের। প্রায় চার হাজার নাবালিকা গর্ভধারণের তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

কেন্দ্রের রিপোর্টে জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে নাবালিকা গর্ভধারণের হার বেশি বলে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, নাবালিকা গর্ভধারণের প্রভাব পড়েছে প্রসূতি ও শিশুমৃত্যুতেও। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দেড়শো শয্যার প্রসূতি বিভাগে প্রতি মাসে গড়ে চার জনের, বছরে ৫০ জনের মৃত্যু স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। সেখানে গত বছরে ৬৩ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ বছর জুলাইয়ে জেলায় ১২৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যা উদ্বেগের বলেই স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন।

পূর্ব বর্ধমান জেলায় বাল্য বিবাহ বেড়েছে ৯.২ শতাংশ। প্রশাসনিক কর্তারা মনে করেন, করোনা পর্বে এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। নাবালিকা বিয়ে রোধে ছাত্রদেরও সামনে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা। অ্যান্ড্রয়েড বা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে গিয়ে কী কী ভুল পড়ুয়ারা করে তারও ধারণা দিতে জেলা পুলিশের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি নিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনের দাবি, ৩১ রকমের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (নারী ও শিশুকল্যাণ) মিঠু মাঝি বলেন, ‘‘নাবালিকা গর্ভধারণে জেলার মাথাব্যথা কাটোয়া মহকুমা। ওই মহকুমার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। কন্যাশ্রী-রূপশ্রী ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচার আরও নিবিড় ভাবে করা হবে।’’

একটি সাত দফা নির্দেশিকায় জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ঠেকাতে উদ্যোগী হতে হবে ব্লক, মহকুমাগুলিকে। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও পুর এলাকায় ওয়ার্ডভিত্তিক শিশুসুরক্ষা কমিটি গঠনও বাধ্যতামূলককরা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন