নৌকাডুবির পরে ফের সেতুর দাবি কালনায়

ভাগীরথীর এ পারে কালনা ফেরিঘাট। উল্টো দিকে নদিয়ার নৃসিংহপুর ঘাট। যোগাযোগের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই পাকা সেতুর দাবি রয়েছে দু’দিকের বাসিন্দাদের। বেশ কয়েক বছর আগে সেতু তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরুও হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০১:৩৭
Share:

ভাগীরথীর এ পারে কালনা ফেরিঘাট। উল্টো দিকে নদিয়ার নৃসিংহপুর ঘাট। যোগাযোগের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই পাকা সেতুর দাবি রয়েছে দু’দিকের বাসিন্দাদের। বেশ কয়েক বছর আগে সেতু তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরুও হয়। তবে সেখানেই থমকে যায় তা। নৌকাডুবির ঘটনার পরে আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে সেতুর দাবি। বাসিন্দাদের কথায়, সেতু থাকলে দুর্যোগের রাতে নৌকা পার হতে গিয়ে এমন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হতো না কুড়ি জনকে।

Advertisement

এই খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। ধান, চাল, মাছ, স্থানীয় বেকারির নানা জিনিসও বার্জে পাঠানো হয়। পার হয় ভারী যানবাহনও। এমনকী সারা বছরই নদীপথে কালনা শহরে আসেন দেশি, বিদেশি পর্যটকেরা। স্থানীয় মানুষজনের দাবি, দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ওই সেতুর দাবি জানানো হচ্ছে। সেতু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে পর্যটন সবেরই উন্নতি হবে। অথচ প্রশাসনের তরফে সেভাবে উদ্যোগই নেই। তাঁদের দাবি, সেতু হলে নদিয়ায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে এসটিকেকে রোড সরাসরি জুড়ে যাবে। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় যাতায়াতেরও আর একটা রাস্তা হবে। বাড়বে পর্যটকদের সংখ্যাও। বাইরে থেকে লোক আসলে লাগোয়া ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়, শান্তিপুরের তাঁত শিল্পের কদরও বাড়বে বলে তাঁদের দাবি। তবে বারবার পুরসভা এবং বিধানসভায় আলোচনার পরেও মাপজোকের বেশি সেতু তৈরির কাজ এগোয়নি বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।

এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, বছর পনেরো আগে সেতু তৈরির জন্য কালনা খেয়াঘাট লাগোয়া একটি জায়গায় শিলান্যাস হয়। কিন্তু সেখানেই শেষ হয়ে যায় যাবতীয় উদ্যোগ। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ফের নাড়াচাড়া শুরু হয়। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, বছর চারেক আগে কালনা পুরসভা সেতুর পুরানো নথিপত্র বের করে ফের নতুন করে জেলাশাসক-সহ রাজ্য স্তরের বিভিন্ন আধিকারিককে চিঠি পাঠায়। বিধায়ক তথা তৎকালীন পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর উদ্যোগে সরকারি ভাবে বিস্তারিত প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি হয়। সেতু তৈরির খরচ ধরা হয় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা। কোন পথে সেতুটি তৈরি হবে সে ব্যাপারেও পূর্ত দফতর মানচিত্র তৈরি করে। বছর দুয়েক আগে পুরসভাকে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ররা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী কালনার বেলতলা থেকে শান্তিপুর এলাকার কালীতলা পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার লম্বা সেতু তৈরি হবে। ভাগীরথীর পাড়ের কোন কোন বাড়ি ভাঙতে হতে পারে সে তালিকাও তৈরি হয়। কিন্তু খাতা-কলমের গণ্ডীতেই কাজ আটকে যায়। সম্প্রতি ভবা পাগলার মেলা চলাকালীন কালনা খেয়াঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যুতে আবারও সেতুর দাবিতে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। কালনা শহরের বাসিন্দা গোপা ঘোষ বলেন, ‘‘কংক্রিটের সেতুটি চালু হয়ে গেলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। এ বার অন্তত সেতুর কাজ শুরু করা উচিত।’’

Advertisement

বাসিন্দাদের দাবী মেনে বিধায়কও বলেন, ‘‘সেতুর বিষয়টি খুব শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী এবং পূর্তমন্ত্রীকে সবিস্তারে জানানো হবে। চিঠিতে নৌকাডুবির ঘটনারও উল্লেখ থাকবে।’’ কিন্তু কাজ থমকে গিয়েছে কেন তার সদুত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা শুধু জানান, আরও কিছু সেতু তৈরির কাজ আগে ধরা রয়েছে। সেগুলি আগে শেষ করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন