সাত প্রাথমিক স্কুল দুই ভবনে পাঠাতে আপত্তি

কারখানার শ্রমিক-কর্মী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ছেলেমেয়েদের জন্য সাতটি প্রাথমিক, দু’টি মাধ্যমিক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল তৈরি করেছিলেন কেবলস কর্তৃপক্ষ। মার্চে কারখানায় ঝাঁপ পড়ার পরে স্কুলগুলি নিয়ে দু’টি সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। প্রথমত, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলিকে ভবন ও জমি-সহ রাজ্য শিক্ষা দফতরকে হস্তান্তর করা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারখানা এলাকায় থাকা সাতটি প্রাথমিক স্কুলের ভবনে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবলস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই প্রস্তাবের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন অভিভাবক ও স্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ।

Advertisement

ওই অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে বহু পড়ুয়াকে অনেক বেশি রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে স্কুলছুটের সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অবশ্য আশ্বাস, পড়ুয়াদের সমস্যা হতে পারে এমন কোনও প্রস্তাব গৃহীত হবে না।

কারখানার শ্রমিক-কর্মী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ছেলেমেয়েদের জন্য সাতটি প্রাথমিক, দু’টি মাধ্যমিক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল তৈরি করেছিলেন কেবলস কর্তৃপক্ষ। মার্চে কারখানায় ঝাঁপ পড়ার পরে স্কুলগুলি নিয়ে দু’টি সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। প্রথমত, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলিকে ভবন ও জমি-সহ রাজ্য শিক্ষা দফতরকে হস্তান্তর করা হবে। দ্বিতীয়ত, প্রাথমিক স্কুলগুলিকে দু’টি মাধ্যমিক স্কুলের ভবনে তুলে আনা হবে। এই দ্বিতীয় সিদ্ধান্তেই রাজি নন এলাকার অনেকে।

Advertisement

প্রাথমিক স্কুলগুলির শিক্ষকদের একাংশ পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্কুলগুলিকে এক জায়গায় তুলে আনা হলে বেশির ভাগ পড়ুয়াকেই গড়ে চার কিলোমিটার পথ উজিয়ে স্কুলে পৌঁছতে হবে। যেমন, হিন্দুস্তান কেবলস জুনিয়র বেসিক (২) বাংলা মাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘মালবহাল ও হলুদকানালি মৌজা লাগোয়া এলাকার পড়ুয়ারা আমাদের স্কুলে আসে। ওই প্রস্তাব কার্যকর হলে তাদের অন্তত তিন কিলোমিটার রাস্তা যেতে হবে।’’ জুনিয়র বেসিক (৩) বাংলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপালি মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমাদের স্কুলের পড়ুয়াদেরও অন্তত চার কিলোমিটার পথ পেরোতে হবে।’’ যাতায়াতের রাস্তাটিও ভাল নয় বলে দাবি তাঁদের। বাকি স্কুলগুলির পড়ুয়ারাও একই রকম সমস্যায় পড়বে বলে অভিযোগ।

শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশ শিক্ষা দফতর ও জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এর জেরে গরিব পরিবারগুলির অনেক পড়ুয়া আর স্কুলে যাবে না। মাঝ পথেই তাদের পড়া বন্ধের উপক্রম হবে। চিত্তরঞ্জন শিক্ষাচক্রের স্কুল পরিদর্শক শ্রীকান্ত দোলুই বলেন, ‘‘আমরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। শিক্ষা দফতরে বিশদ রিপোর্ট জমা দেব।’’ সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ওই স্কুলগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকার প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। এখন ভবন ছাড়তে হলে সেই সম্পদের কী হবে?’’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান আশিস দে জানান, প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুল গড়াই সিদ্ধান্ত সরকারের। এক্ষেত্রে স্কুলগুলিকে এক জায়গায় আনা মানে সেই সিদ্ধান্তের উল্টো কাজ করা। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়বে এমন কোনও প্রস্তাব গৃহীত হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন