মাটি ফেলে ভরাট করা হবে এই বাসস্ট্যান্ডেরই একাংশ।—নিজস্ব চিত্র।
খোলা বাজারে এক ট্রলি মাটির দাম শ’চারেক টাকা। সেখানে গুসকরা পুরসভা এক ট্রলি মাটি কিনেছে ১১৭৩ টাকায়। আবার নিয়মে ফাঁকি দিয়ে ই-টেন্ডার না ডেকেই ওই মাটি দিয়ে বাসস্ট্যান্ডের নিচু এলাকা ভরাট করার জন্য ঠিকাদারদের কাজের বরাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই পুরসভার বিরুদ্ধে।
বিজেপির প্রাক্তন কাউন্সিলর শান্তি কর্মকার ইতিমধ্যেই তৃণমূল পরিচালিত ওই পুরসভার বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে চিঠি দিয়েছেন মহকুমাশাসক, জেলাশাসক থেকে পুরসভার সচিবকে। তাঁর দাবি, ই-টেন্ডার না ডেকে এক জমিকে চার ভাগে ভাগ করে কাজের বরাত দিয়েছে পুরসভা। দুর্নীতি নিয়ে সবর হয়ে পুরবোর্ডের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সিপিএমও। অভিযোগের ভিত্তিতে বর্ধমানের মহকুমাশাসক (উত্তর) পুরসভার নিবার্হী আধিকারিকদের কাছে দ্রুত রিপোর্ট চেয়েছেন। যদিও দুর্নীতির অভিযোগ মানতে নারাজ গুসকরা পুরসভা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গুসকরা বাসস্ট্যান্ডের নিচু ও জলা জায়গা ভরাট করার জন্য ২০১০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাজ্য পরিবহণ দফতর পুরসভাকে ১৫ লক্ষ টাকার বিশেষ অনুদান দেয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ওই টাকা পুরসভার তহবিলেই পড়েছিল। পরে রাজ্য সরকার সুদ-সহ টাকা ফেরত নেওয়ার কথা জানানোয় এ বছরের জানুয়ারিতে মাটি ফেলার জন্য দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করে পুরসভা। অর্থ দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ লক্ষ টাকার উপরে কাজের বরাত দিতে গেলে ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ কাজে তা করা হয়নি বলে অভিযোগ। বিরোধীদের দাবি, গুসকরা বাসস্ট্যান্ডের একটা নিচু চত্বরকে মাটি ফেলে ভরাট করা কথা। অথচ ই-টেন্ডার এড়াতে সেই জায়গাটিকে চার ভাগে ভাগ করে, চারটি পর্যায়ে মাটি ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। ফলে ১৫ লক্ষ টাকা চার ভাগে ভগ হয়ে যাওয়ায় প্রতিটি পর্যায়ে পাঁচ লক্ষ টাকার নীচে ঠিকাদারদের বরাত দেওয়ার সুযোগ তৈরি হল। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের তৈরি নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে ই-টেন্ডার ডাকারও প্রয়োজন পড়ল না তৃণমূলের ওই পুরসভার। বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের মনোজ সাউয়ের অভিযোগ, “ই-টেন্ডার না করে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদারদের কাজের বরাত দিয়েছে পুরসভা। উন্নয়নের টাকা দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রেখে নয়ছয় করছে তারা।’’ যদিও গুসকরার পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়ের দাবি, “ওই টাকা চারটি পর্যায়ে ভাগ করেই বাসস্ট্যান্ডের নিচু এলাকা মাটি দিয়ে ভরাট করার কথা বলা হয়েছিল। আমরা সেই মতো টাকা ভাগ করে কাজ করেছি। ফলে ই-টেন্ডার করার প্রয়োজন হয়নি।”
এর সঙ্গেই যে মাটি দিয়ে বাসস্ট্যান্ডের নিচু এলাকা ভরাট করা হবে সেই মাটির দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির প্রাক্তন কাউন্সিলর শান্তি কর্মকার। জেলা প্রশাসন ও পুর দফতরে চিঠি দিয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন, কী ভাবে উন্নয়নের টাকা ঠিকাদারদের পকেটে গিয়ে ঢুকছে। তাঁর অভিযোগ, “এক ট্রলিতে তিন ঘনমিটার মাটি পাওয়া যায়। যার বাজার দাম ৩৫০ থেকে ৪০০টাকা। অথচ গুসকরা পুরসভা ওই মাটি কিনছে ১১৭৩ টাকায়।” তাঁর আরও দাবি, ওই এলাকায় ১২০০ ট্রলি মাটি ফেলা হয়েছে। যার দাম বাবদ পুরসভাকে দিতে হবে ১৪ লক্ষ সাত হাজার ছশো টাকা। অথচ খোলা বাজারে ওই মাটির দাম পড়ত মাত্র ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হতো। যে টাকা দিয়ে পুরসভা অসমাপ্ত বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়ন করতে পারত। শান্তিবাবুর অভিযোগ, “মাটির পরিমাপ না করে ট্রলি হিসাবে ঠিকাদারদের টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুরসভা।” সিপিএমের মনোজবাবুরও অভিযোগ, “যে পরিমাণ মাটি ফেলার জন্য বরাত দেওয়া হয়েছিল, সেই পরিমাণ মাটি পড়েনি বলেই আমাদের সন্দেহ।”
এই অভিযোগ পেয়ে গত ২৭ এপ্রিল বর্ধমানের মহকুমাশাসক (উত্তর) গুসকরা পুরসভার নির্বাহী বাস্তুকারকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুত একটা রিপোর্ট পেশ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে চিঠি পাওয়ার ২০ পার হয়ে গেলেও রিপোর্ট তৈরি করতে পারেননি নির্বাহী বাস্তুকার বাসুদেব পাল। তাঁর কথায়, “রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। যা বলার পুরপ্রধান বলবেন।” আর পুরপ্রধানের জবাব, “পূর্ত দফতরের নিয়ম মেনে আমরা দরপত্র দিয়েছিলাম। কাজেই কোনও দুর্নীতির প্রশ্নই ওঠে না।”