অনুমোদনের পরেও উন্নত চিকিৎসার কেন্দ্র গড়া আটকে

পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিটের টাকা পড়েই

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট তৈরির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্রের ওই কমিটিকে সে ব্যাপারে বিশদে জানিয়েছি।’’

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৬
Share:

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

কেন্দ্রের টাকা এসে গিয়েছে রাজ্যে। কিন্তু তা জেলায় এসে পৌঁছয়নি। ফলে, থমকে রয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট গড়ার কাজ। মাস কয়েক আগে প্রকল্পের হাল-হকিকত দেখতে এসে এ কথা জেনেছে কেন্দ্রের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি।

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট তৈরির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্রের ওই কমিটিকে সে ব্যাপারে বিশদে জানিয়েছি।’’ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাক জানান, কেন্দ্র থেকে হাসপাতালে বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার টাকা এসে গিয়েছে। কিন্তু ‘টেকনিক্যাল’ কারণে সেই টাকা এখনও তাঁদের কাছে এসে পৌঁছয়নি। তবে, হাসপাতালে বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের কাজ তৈরি হয়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলায় অগ্নিদগ্ধ রোগীদের রাখা হয়। সেখানকার পরিকাঠামো নিয়ে নালিশের অন্ত নেই। পরিজনদের অভিযোগ, তিরিশ শয্যার ওই ইউনিটে গাদাগাদি করে থাকতে হয় রোগীদের। ওই ইউনিটের দু’টি ঘরেই অবাধে জুতো পরে যাতায়াত করেন রোগীর বাড়ির লোকজনেরা। রোগীর বিছানাতেও তাঁদের বসতে দেখা যায়। এ ছাড়া বাতানুকূল যন্ত্র প্রায় সময়েই কাজ করে না। খোলা থাকে জানলা। রোগীদের অনেকের অভিযোগ, ঘরে বেড়াল ঘুরে বেড়ায় অবাধে। ফলে, সংক্রমণের ভয় থেকেই যায়।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই ইউনিটে অতি প্রয়োজনীয় স্কিন গ্রাফটিং বা প্লাস্টিক সার্জারির ব্যবস্থা নেই। আলাদা করে আইটিইউ-এরও ব্যবস্থা নেই। অথচ, এই হাসপাতালের উপরে দুই বর্ধমান জেলা তো বটেই, লাগোয়া পুরুলিয়া, বীরভূমের মতো জেলাও নির্ভরশীল। হাসপাতালের হিসেবে, গড়ে প্রতি মাসে ৯৫-১০৫ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী ভর্তি হন জরুরি বিভাগের ওই ইউনিটে। এ ছাড়া রাধারানি ওয়ার্ডেও অনেক অগ্নিদগ্ধ রোগীকে ভর্তি করানো হয়।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বার্ন ইনজুরিস’-এর টাকায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট গড়ে ওঠার কথা। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালের ‘নিউ বিল্ডিং’-এর এক তলায় বার্ন ইউনিট তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি আইটিইউ পর্যন্ত থাকবে। স্কিন গ্রাফটিং, প্লাস্টিক সার্জারিও করা হবে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ৬ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছিল। কেন্দ্র দু’দফায় প্রায় তিন কোটি টাকা রাজ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে।

সেই টাকা বর্ধমানে আসছে না কেন? হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির এক সদস্যের দাবি, বছর দুয়েক আগে প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা এসেছিল। চলতি বছরের গোড়ায় বাকি টাকা স্বাস্থ্য দফতরে জমা পড়েছে। তা পাওয়ার জন্য ছ’মাস আগে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমোদন চাওয়া হয় স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয়তা জানতে চেয়েই চিঠি পাঠায়।

এই পরিস্থিতিতে আটকে রয়েছে বার্ন ইউনিট গড়ার কাজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন